রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, সন্ধ্যা ৬:৩৬
রবিবার, ২৮ মে ২০২৩,সন্ধ্যা ৬:৩৬

এখন সম্বল বলতে শুধুই ছাই!

মনিরামপুরে আশ্রয়ণের ১০ ঘরে অগ্নিকাণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার, মনিরামপুর (যশোর)

৮ মার্চ, ২০২৩,

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp

৯:৩৮ pm

পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ২ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে তুলে ঘরে রেখে ধান ক্ষেতের পরিচর্যা করতে স্ত্রীকে নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন মোসলেম হোসেন। ক্ষেত থেকে ধোঁয়া দেখতে পেয়ে দৌড়ে আসেন ঘরের সামনে। ততক্ষণে ঘরের ভিতরে আগুন দাউদাউ করে জ্বলছিল। আগুনের ফুলকিতে সামনে এগুতে পারেননি মোসলেম। চোখের সামনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়েছে ভূমিহীন এ বৃদ্ধর।

জমি বর্গা রাখার জন্য সমিতি থেকে তোলা ৪০ হাজার টাকাসহ ভ্যান চালিয়ে জমানো আরো ২০ হাজার টাকা ঘরে বাক্সে রেখেছিলেন আলমগীর হোসেন। পাশের ঘরে লাগা আগুন ধেয়ে এসে চোখের পলকে টাকাসহ ঘরের আসবাবপত্র, কাপড় চোপড় ছাই করে দিয়েছে।
একইভাবে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে সোহেল রানার গরু বিক্রির ১ লাখ ২২ হাজার টাকা।

এভাবে চোখের সামনে পুড়ে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন যশোরের মনিরামপুরের গোবিন্দপুর আশ্রয়ণ পল্লির ১০টি ভূমিহীন পরিবার। পুড়েছে সরকারিভাবে পাওয়া জমি ও ঘরের দলিলপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।

গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে আশ্রয়ণ পল্লিতে হঠাৎ লাগা আগুন ২০ মিনিটে ১১ থেকে ২০ নম্বর ঘরের সব কিছু পুড়ে গেছে। খবর পেয়ে মনিরামপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৩ ঘন্টা চেষ্টা করে রাত ৮ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। রাতে যখন আগুন নেভে ততক্ষণে বেঁচে থাকার অবলম্বন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে ১০টি পরিবার। এরপর থেকে মানবেতর সময় কাটাচ্ছে পরিবারগুলো। থাকার ঘর হারিয়ে তাঁরা এখন আশ্রয় নিয়েছেন রান্নাঘর, গোয়ালঘর বা খোলা আকাশের নিচে। এখন সম্বল বলতে পরিবারগুলোর রয়েছে শুধু ছাই।
সেই ছাই হওয়া অবলম্বনের দিকে তাকিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিহীন লোকগুলো। বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্ত আশ্রয়ণ পল্লি ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়েছে।

এদিকে খবর পেয়ে সোমবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানমসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

উপজেলা প্রশাসন উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন। এরপর মঙ্গলবার থানা বিএনপি ও উপজেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়।

এদিকে বুধবার দুপুরে পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনে দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

২০০৮ সালে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে খাস জমিতে টিনের বেড়া ও চালার ৪০ টি ঘর নির্মাণ করে সরকার। এরপর ইউনিয়নের ৪০ টি ভূমিহীন পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। এ পল্লির অধিকাংশ পুরুষ দিনমজুর। কেউবা ভ্যান চালক। আর নারী সদস্যরা মাঠ বা কারখানার শ্রমিক।

সোমবার লাগা আগুনে আশ্রয়ণ পল্লির আলমগীর হোসেন, রফিকুল ইসলাম, রনি হাসান, কাসেম খন্দকার, সোহেল রানা, ফিরোজা বেগম, মোসলেম হোসেন, রিক্তা খাতুন, মাসুদ রানা ও তহমিনা বেগম সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন।

ক্ষতিগ্রস্ত মোসলেম হোসেন বলেন, অনেক টাকা ঋণ আছি। ঢাকায় বাবার এক টুকরো সম্বল বেচে ভাগেরভাগ দু লাখ টাকা পাইছি। সে টাকা তুলে এনে ঘরে রাখিছি। ভাবিছি এ দিয়ে ধারদেনা শোধ করব। টাকা তুলে ঘরে ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন লেগে আমার সব শেষ হয়ে গেছে।

ফিরোজা বেগম বলেন, স্বামী থেকে পৃথক হওয়ার পর ১৫ বছর আগে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আশ্রয়ণের ঘরে উঠি। মাঠে কামলা দিয়ে তিলে তিলে ঘর গুছিয়েছি। আগুন লেগে সব শেষে হয়ে গেছে। পরনের কাপড়টা ছাড়া বিছিয়ে শোয়ারমত একটা কাগজও নেই। এখন রান্না ঘরে থাকছি। পোড়া ঘরের দিকে তাকালে বুক হাহাকার করে ওঠে।

প্রত্যক্ষদর্শী মেহেদী হাসান সোহাগ বলেন, আশ্রয়ণের ১৬ বা ১৭ নম্বর ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। একে একে পাশাপাশি ৮ টি ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ও সময় ঘরের বাসিন্দারা বাইরে যে যার মত কাজে ছিলেন। আগুন দেখে সবাই ছুটে এসে নেভানোর চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তাঁরা ২০ মিনিটের মাথায় চলে আসে। এরপর ৩ ঘন্টা চেষ্টা করে তাঁরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোহাগের ভাষ্য, এ দৃশ্য দেখার না। মুহূর্তে সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।মনিরামপুর ফায়ার স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রণব বিশ্বাস বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শক সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আনুমানিক সাড়ে ৫ লাখ।
মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করা হয়েছে। ঘর মেরামতের জন্য তাঁদের টিন ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।

Related Posts

এখন সম্বল বলতে শুধুই ছাই!

মনিরামপুরে আশ্রয়ণের ১০ ঘরে অগ্নিকাণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার, মনিরামপুর (যশোর)

৮ মার্চ, ২০২৩,

৯:৩৮ pm

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp

পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ২ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে তুলে ঘরে রেখে ধান ক্ষেতের পরিচর্যা করতে স্ত্রীকে নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন মোসলেম হোসেন। ক্ষেত থেকে ধোঁয়া দেখতে পেয়ে দৌড়ে আসেন ঘরের সামনে। ততক্ষণে ঘরের ভিতরে আগুন দাউদাউ করে জ্বলছিল। আগুনের ফুলকিতে সামনে এগুতে পারেননি মোসলেম। চোখের সামনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়েছে ভূমিহীন এ বৃদ্ধর।

জমি বর্গা রাখার জন্য সমিতি থেকে তোলা ৪০ হাজার টাকাসহ ভ্যান চালিয়ে জমানো আরো ২০ হাজার টাকা ঘরে বাক্সে রেখেছিলেন আলমগীর হোসেন। পাশের ঘরে লাগা আগুন ধেয়ে এসে চোখের পলকে টাকাসহ ঘরের আসবাবপত্র, কাপড় চোপড় ছাই করে দিয়েছে।
একইভাবে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে সোহেল রানার গরু বিক্রির ১ লাখ ২২ হাজার টাকা।

এভাবে চোখের সামনে পুড়ে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন যশোরের মনিরামপুরের গোবিন্দপুর আশ্রয়ণ পল্লির ১০টি ভূমিহীন পরিবার। পুড়েছে সরকারিভাবে পাওয়া জমি ও ঘরের দলিলপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।

গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে আশ্রয়ণ পল্লিতে হঠাৎ লাগা আগুন ২০ মিনিটে ১১ থেকে ২০ নম্বর ঘরের সব কিছু পুড়ে গেছে। খবর পেয়ে মনিরামপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৩ ঘন্টা চেষ্টা করে রাত ৮ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। রাতে যখন আগুন নেভে ততক্ষণে বেঁচে থাকার অবলম্বন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে ১০টি পরিবার। এরপর থেকে মানবেতর সময় কাটাচ্ছে পরিবারগুলো। থাকার ঘর হারিয়ে তাঁরা এখন আশ্রয় নিয়েছেন রান্নাঘর, গোয়ালঘর বা খোলা আকাশের নিচে। এখন সম্বল বলতে পরিবারগুলোর রয়েছে শুধু ছাই।
সেই ছাই হওয়া অবলম্বনের দিকে তাকিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিহীন লোকগুলো। বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্ত আশ্রয়ণ পল্লি ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়েছে।

এদিকে খবর পেয়ে সোমবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানমসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

উপজেলা প্রশাসন উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন। এরপর মঙ্গলবার থানা বিএনপি ও উপজেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়।

এদিকে বুধবার দুপুরে পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনে দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

২০০৮ সালে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে খাস জমিতে টিনের বেড়া ও চালার ৪০ টি ঘর নির্মাণ করে সরকার। এরপর ইউনিয়নের ৪০ টি ভূমিহীন পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। এ পল্লির অধিকাংশ পুরুষ দিনমজুর। কেউবা ভ্যান চালক। আর নারী সদস্যরা মাঠ বা কারখানার শ্রমিক।

সোমবার লাগা আগুনে আশ্রয়ণ পল্লির আলমগীর হোসেন, রফিকুল ইসলাম, রনি হাসান, কাসেম খন্দকার, সোহেল রানা, ফিরোজা বেগম, মোসলেম হোসেন, রিক্তা খাতুন, মাসুদ রানা ও তহমিনা বেগম সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন।

ক্ষতিগ্রস্ত মোসলেম হোসেন বলেন, অনেক টাকা ঋণ আছি। ঢাকায় বাবার এক টুকরো সম্বল বেচে ভাগেরভাগ দু লাখ টাকা পাইছি। সে টাকা তুলে এনে ঘরে রাখিছি। ভাবিছি এ দিয়ে ধারদেনা শোধ করব। টাকা তুলে ঘরে ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন লেগে আমার সব শেষ হয়ে গেছে।

ফিরোজা বেগম বলেন, স্বামী থেকে পৃথক হওয়ার পর ১৫ বছর আগে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আশ্রয়ণের ঘরে উঠি। মাঠে কামলা দিয়ে তিলে তিলে ঘর গুছিয়েছি। আগুন লেগে সব শেষে হয়ে গেছে। পরনের কাপড়টা ছাড়া বিছিয়ে শোয়ারমত একটা কাগজও নেই। এখন রান্না ঘরে থাকছি। পোড়া ঘরের দিকে তাকালে বুক হাহাকার করে ওঠে।

প্রত্যক্ষদর্শী মেহেদী হাসান সোহাগ বলেন, আশ্রয়ণের ১৬ বা ১৭ নম্বর ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। একে একে পাশাপাশি ৮ টি ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ও সময় ঘরের বাসিন্দারা বাইরে যে যার মত কাজে ছিলেন। আগুন দেখে সবাই ছুটে এসে নেভানোর চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তাঁরা ২০ মিনিটের মাথায় চলে আসে। এরপর ৩ ঘন্টা চেষ্টা করে তাঁরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোহাগের ভাষ্য, এ দৃশ্য দেখার না। মুহূর্তে সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।মনিরামপুর ফায়ার স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রণব বিশ্বাস বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শক সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আনুমানিক সাড়ে ৫ লাখ।
মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করা হয়েছে। ঘর মেরামতের জন্য তাঁদের টিন ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।

Related Posts