যশোরের মনিরামপুরে নাওয়াদ জামান বরিশা (১৭) নামে এক কিশোরী বধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার পাঁচাকড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
শ্বশুর পক্ষের দাবি, ভাত খাওয়া নিয়ে স্বামী আরশীল কবিরের সাথে ঝগড়া হওয়ায় বরিশা গলায় ওড়না জড়িয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
সন্দেহ হওয়ায় থানা পুলিশ রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। প্রকৃত ঘটনা জানতে গৃহবধূর স্বামী আরশিল কবির, শ্বশুর আজমত ফকির, শাশুড়ি আসমা বেগম ও চাচি শাশুড়ি শিল্পি বেগমকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
বরিশা খাতুন যশোর সদর উপজেলার সাতিয়ানতলা এলাকার কলেজ শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান সবুজের মেয়ে। প্রেমের সম্পর্কের জেরে এক বছর আগে পরিবারের অমতে আরশিল কবিরের হাত ধরে বাবার বাড়ি ছাড়েন বরিশা। পরে পুলিশের মাধ্যমে মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে যান তার পরিবার। এরপর ৮ মাস আগে আবার কবিরের সাথে পালিয়ে আসে বরিশা। অভিমানে তখন থেকে মেয়ের খোঁজ নেননি শিক্ষক বাবা।
বরিশা খাতুনের আত্মহত্যার ঘটনায় রোববার সকালে মনিরামপুর থানায় অপমৃত্যু মামলা করেছেন শ্বশুর আজমত ফকির। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, আরশিল কবির ও বরিশাকে বাড়ি রেখে শনিবার তাঁরা স্বামী-স্ত্রী আত্মীয়র বাড়ি যান। রাত ১১ টার দিকে বাড়ির পাশের বাজার থেকে বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে নিয়ে রাতের খাবার সারতে চান কবির। কিন্তু অভিমান করে স্ত্রী খাবার খেতে চাননি। এতে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে স্ত্রীকে ঘরে রেখে ফের বাজারে যান কবির। কিছুক্ষণ পড় বাড়ি ফিরে ঘরের প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখেন।
পরে আশপাশের লোকজনের সহায়তায় তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে গলায় ওড়না জড়িয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলতে দেখেন বরিশাকে। দ্রুত তাঁকে নামিয়ে স্থানীয় এক পল্লি চিকিৎসকের কাছে নিলে তিনি বরিশাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নেহালপুর ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আতিকুজ্জামান বলেন, ‘গৃহবধূর দেহে নির্যাতনের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রকৃত ঘটনা জানতে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ চার জনকে আমরা হেফাজতে নিয়েছি’।
এসআই আতিকুজ্জামান বলেন, কবিরের সাথে চলে আসায় কলেজ শিক্ষক বাবা আর মেয়ের খবর রাখেননি। মেয়ের আত্মহত্যার খবর শুনে তাঁরা থানায় আসেন। হাসপাতালের মর্গে থেকে তাঁরা মেয়ের মরদেহ নিজেদের হেফাজতে নিয়েছেন।
রোববার সন্ধ্যায় এসআই আতিকুজ্জামান আরো বলেন, বরিশার স্বজনদের অভিযোগে তাকে নির্যাতন করে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছেন স্বামী পক্ষ। এ অভিযোগে তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হেফাজতে আনা চার জনের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।