বাগেরহাটের শরণখোলার একমাত্র নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী আয়েশা বেগম (৮০) তাঁর নাতীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
তাঁর মেয়ের ঘরের দুই নাতী ও এক নাতীর ছেলে বাড়িতে ঢুকে বসতঘর কুপিয়ে ও পিটিয়ে ভাঙচুর করে। টিনশেড সেমিপাকা ঘরটিতেও তালা লাগিয়ে দিয়েছে ওই নাতীরা। তাঁর শহীদ স্বামী ও তাঁর মুক্তিযোদ্ধা ভাতার (সম্মানি) টাকা আত্মসাত ও বাড়িঘর দখলে নেওয়ার জন্যই তারা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন আয়েশা বেগম।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আ. মান্নান হাওলাদারের স্ত্রী আয়েশা বেগম সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে সরেজমিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।
এর আগে গত শনিবার (১১ ফেব্রæয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের দীপচর গুচ্ছগ্রাম এ ঘটনা ঘটে।
আয়েশা বগেম দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকা থেকে বিশেষ সম্মাননাপ্রাপ্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। শরণখোলার নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ২০১১ সালে কালের কণ্ঠ তাঁকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। পত্রিকা থেকে তাঁকে নগদ এক লক্ষ টাকা, ক্রেস্ট ও স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। একই বছর বেসরকারি টেলিফোন কোম্পানি ‘রবি’ থেকে বিজয়িনী এবং ২০২১ সালে আমিন জুয়েলার্স তাঁকে অপরাজিতা পুরস্কারে ভুষিত করে।
অভিযোগে জানা যায়, দুই নাতী দীপচর গ্রামের মৃত ছত্তার মল্লিকের ছেলে আনোয়ার মল্লিক (৪০), রিপন মল্লিক (৩৫) এবং আনোয়ার মল্লিকের ছেলে নাইম মল্লিক (২৪) তাঁর বাড়িতে ঢুকে প্রায় আধাঘন্টা ধরে তান্ডব চালায়। এনিয়ে বাড়াবাড়ি করলে বেপরোয়া নাতীরা তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। একারণে ঘটনাটি এতোদিন গোপন রেখেছিলেন বলে জানান আয়েশা বগেম। তবে, ঘটনাটি ওইদিন শরণখোলা থানায় মৌখিকভাবে অবহিত করলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। নাতীরা তাঁকে এখনো নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এব্যাপারে থানায় মামলা করবেন বলে জানান তিনি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কালের কণ্ঠর অনুদানে তৈরী কাঠের ঘরের টিনের বেড়ায় অসংখ্য কোপের চিহ্ন। কুপিয়ে ঝাজরা করা হয়েছে টিনের বেড়া। জানালার সিকগুলো ভাঙা। ঘরের ভেতরে আলমারির কাঁচও ভেঙে টুকরো করা হয়েছে। বারান্দা থেকে মূল ঘরে ঢুকতেই দরজার ওপরে কালের কণ্ঠ থেকে প্রাপ্ত অনুদানের নাম ফলকটি টাঙানো রয়েছে। পাশের ত্রাণের টিনশেড সেমিপাকা ঘরটিতেও তালা ঝুলতে দেখা গেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়েশা বগেম বলেন, মোর (আমার) স্বামী আ. মান্নান হাওলাদার যুদ্ধে শহীদ হইছে। মোর কোনো জায়গা জমি না থাহায় এরশাদের আমলে সাড়ে তিন কাঠা জমি দিছে গুচ্ছগ্রামে। কালের কণ্ঠ যে টাহা (টাকা) দিছে হেই টাহা দিয়া কাঠের ঘর বানিয়াই বসবাস করছি। এছাড়া পরে একখান ত্রাণের ঘরও (টিনশেড সেমিপাকা) পাইছি। মোর নাতীরা খুব জ্বালায়। মোর স্বামী আর মোর ভাতার টাকা চায়। হেয়াগো অনেক দিছি। হেয়ার পরও আরো চায়। ওরা নেশা করে। হেই টাকাও আমার কাছে চায়। টাকা না দেওয়ায় বাড়ি ভাঙচুর করছে। ফিরাইতে গ্যালে ওরা মোরে গায়ে কিল-ঘুষি দিছে। ওরা (নাতীরা) মোরে মাইরা ফালানোর হুমকি দিছে। এহন হেয়াগো ভয়ে বাইরেও যাইতেও ডর লাগে।
প্রতিবেশী আ. জলিল হাওলাদার বলেন, আনোয়ার মল্লিক, রিপন মল্লিক ও নাইম মল্লিক আয়েশা বেগমরে বাড়িতে হামলা চালাইছে। তারা বেড়া, জানালা ভাঙচুর করছে। আমি বাধা দিলেও তারা ফেরেনাই।
এব্যাপারে অভিযুক্ত রিপন মল্লিকের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমার নানী যে জমিতে থাকে সেই জমি আমাদের দুই ভাইর নামে। এরশাদ সরকারের আমলে আমাগো নামে বরাদ্দ দিছে। সেইখানে গোলপাতার ঘর তুইলা নানীকে নিয়া আমরা থাকতাম। কিন্তু পরবর্তীতে সৎ খালা সালমা বেগমের পরামর্শে আমাাগো সেখান থেইকা নামাইয়া দিছে। সৎ খালা ও তার সন্তানরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নানা ও মুক্তিযোদ্ধা নানীর ভাতা ভোগ করছে। কিন্তু আমরা সেই অধিকার থেইকে বঞ্চিত হচ্ছি। এসব নিয়া কথা বলার কারণে আমাগো বিরুদ্ধে বাড়ি ভাঙচুরের মিথ্যা অভিযোগ করছে।
শরণখোলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুব্রত কুমার বলেন, মৌখিক অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।