যশোরের মনিরামপুরে হরিহর নদী খুঁড়ে বালু তোলার মচ্ছব চলছে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় উপজেলার রাজবাড়িয়া এলাকায় স্কেভেটর দিয়ে এলোপাতাড়ি নদী খুড়ে বালু তুলছে কয়েকজন। বালু তোলায় অংশ নিয়েছেন খোদ রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন। নিজের স্কেভেটর কাজে লাগিয়ে কয়েকদিন ধরে তিনি বালু তোলাচ্ছেন বলে অভিযোগ। স্কেভেটরে বালু তোলায় নদীতে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষ মৌসুমে এ অঞ্চলের পাড় ভেঙে ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা নদীর দু পাড়ের বাসিন্দাদের। স্বয়ং চেয়ারম্যান উপস্থিত থেকে নদী থেকে বালু তোলায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না, এমনটি দাবি স্থানীয়দের।
অভিযোগ রয়েছে, রোহিতা ইউপির চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন রাজবাড়িয়া ও এড়েন্দা গ্রামের কয়েকজন সহযোগীকে সাথে নিয়ে ৮-১০ দিন ধরে নিজের একটি স্কেভেটর দিয়ে রাজবাড়িয়া মোল্লাপাড়ায় হরিহরনদী গভীর করে খুঁড়ে বালু তুলছেন। স্থানীয় আলতাফ ও বাদশার সহায়তায় বালু তুলে নদীর পাড়ে বড় স্তুপ করে রাখা হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, স্কেভেটর দিয়ে নদী গভীর করে বালু তোলায় পাড়ের জমি ভেঙে নিচে চলে যাচ্ছে।তারা বাধা দিতে গেলে শুনছেন না। চেয়ারম্যানের লোক হওয়ায় ভয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছেনা।
রোহিতা ইউনিয়নের রাজবাড়িয়া ও এড়েন্দা গ্রামের বুক চিরে বয়ে গেছে হরিহর নদী। রাজবাড়িয়া মোল্লাপাড়ায় গেলে দেখা যাবে পূর্বদিকে নদীর বিশাল এলাকা জুড়ে খন্ড খন্ড বড় বড় গর্ত করা। স্কেভেটর নামিয়ে সেখান থেকে বালু তুলছেন স্থানীয় প্রভাবশালী কজন।
টলিতে করে বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে সে বালু। আবার কিছু বালু পাড়ে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিন রাজবাড়িয়া মোল্লাপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে হরিহরনদীর মাঝখানে একটি স্কেভেটর চলছে। নদীর ভিতরে ও পাড়ে রাখা আছে ৫-৬ টি বালু টানা বড় টলি। নদীর পাড়ে বসে কাজ তদারকি করছেন রোহিতা ইউপির চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন। স্কেভেটরে বালু তোলায় নদীতে তিনটি গভীর বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
বালু উত্তোলন কাজে জড়িত রাজবাড়িয়া গ্রামের আলতাফ হোসেন বলেন, ‘নদীর পাড়ে আমাদের জমি। সে জমিতে গর্ত করে বালু তুলে ঘর ভিটায় ফেলেছি। স্কেভেটরে কাটার সময় নদীর কিছু অংশ পড়েছে’।
আলতাফের দাবি, কদিন আগে নদীর উত্তর পাশে পাড় ঘেঁষে গভীর করে লেবুগাতী গ্রামের আব্দুল আলীম এবং নদীর মাঝখান থেকে ইত্যা গ্রামের আমিনুর বালু তুলেছেন। এছাড়া নদীর ইত্যা গ্রামের অংশে এখনো স্কেভেটর দিয়ে বালু তোলার কাজ চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজবাড়িয়া গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, রোহিতা ইউনিয়নে কয়েক কোটি টাকার রাস্তার কাজ এসেছে। সে সব রাস্তায় বালু দেয়ার জন্য চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন হরিহর নদী থেকে বালু তুলে পাড়ে জমা করে রাখছেন।
অবশ্য রোহিতা ইউপির চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন নিজের স্কেভেটর দিয়ে নদী খুঁড়ে বালু তোলার কথা স্বীকারও করেছেন।
চেয়ারম্যান বলেন, আমি ১০ গাড়ি বালু তুলতে চাচ্ছিলাম। এখন আর তোলাব না। আমি কোন ঝামেলায় জড়াতে চাচ্ছি না। স্কেভেটর তুলে নেব।
চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আরও বলেন,অনেকে হরিহর নদী থেকে বালু তুলেছে। আলতাফ আমার স্কেভেটর দিয়ে নিজের জমিতে পুকুর খুঁড়েছে। তখন নদীর কিছু অংশ খোঁড়া হয়েছে। তাঁকে নদীর অংশ সমান করে দিতে বলব।
মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলব।