রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা প্রশাসন। অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে সরকারি নিচু জায়গা ভরাটের কাজ। যেখানে প্রশাসন এসব কাজ বন্ধ করবে সেখানে প্রশাসনই পৌর গোহাটার থানা সংলগ্ন স্থানে সরকারি জায়গা ভরাটের কাজে ড্রেজার ব্যবহার করছে। সরকার নিষিদ্ধ ড্রেজার বসানো নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ট্রেনিং বিষয়ে ঢাকায় অবস্থান করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশারেফ হোসাইনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অবৈধ ড্রেজারের সাহায্যে এ ভরাটের কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, প্রায় ৭/৮ দিন ধরে বোয়ালমারী উপজেলার সরকারি বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশের নিচু জায়গা ভরাট করা হচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে। ভরাট কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে সরকার নিষিদ্ধ অবৈধ ড্রেজার। পার্শ্ববর্তী বারাসিয়া নদীতে এ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বারাশিয়া নদীর উপর একটি নবনির্মিত ব্রিজসহ আশেপাশে বসত বাড়িও রয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা এর ফলে ঝুঁকিতে পড়তে পারে ব্রিজটি। আশেপাশের এক কিলোমিটারের মধ্যে আবাসিক এলাকাসহ দোকানপাটও অবস্থিত।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বোয়ালমারী পৌর সদরের আধারকোঠা মাঝিপাড়া নামক স্থানে চন্দনা-বারাসিয়া নদীতে সরকার নিষিদ্ধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে পাইপের সাহায্যে থানা সংলগ্ন সরকারি নিচু জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের স্থান নবনির্মিত ব্রিজ থেকে প্রায় ৪০০ গজের দূরে। সার্বক্ষণিক এ কাজের তদারকি করছেন উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী আসিফ ফুয়াদ লিংকন।
যেখানে ড্রেজার বসানো হয়েছে তার আশেপাশের বাসিন্দারা বলেন, ‘শুনেছি এসিল্যান্ড-ইউএনও ড্রেজার বসিয়েছেন। এজন্য ভয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
পাশের পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের গুনবহা বিশ্বাস পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুদিদোকানদার ফিরোজ বিশ্বাসকে কারা ড্রেজার বসিয়েছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘সাধারণ কোন মানুষ বসালে এতো সময় ধোয়া উড়তো। এসিল্যান্ড-ইউএনও ড্রেজার বসিয়ে থানার পাশের শহীদ মিনার সংলগ্ন নিচু জায়গা ভরাট করছে। ধারণা করছি, এতে আশেপাশের কারোই তেমন ক্ষতি হচ্ছে না বলে আমি মনে করি।’
ড্রেজার মিস্ত্রি মিরাজ মিয়ার কাছে কৌশলে বালি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা সর্বনিম্ন ৫ টাকা দরে এক ফুট বালু কাটি। দূরত্ব দেখে বিস্তারিত পরে বলা যাবে।
তবে ড্রেজার মালিক মুন্নু মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে বালু উত্তোলন করে সরকারি জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। উপজেলা সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ের (ভূমি) আসিফ ফুয়াদ লিংকন আমাকে ঠিক করেছেন।’
এ ব্যাপারে ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. গাজী শাহিদুজ্জামান লিটন বলেন, ‘একমাত্র বালুমহাল যেখানে অবস্থিত সেখান থেকেই শুধুমাত্র ড্রেজারের সাহায্যে বালু উত্তোলন করা যাবে। এছাড়া জনস্বার্থেও ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা যাবে তবে পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকলে সেখান থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না।’
বোয়ালমারী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোল্যা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোন অবস্থাতেই ব্রিজ হতে ৪০০ মিটারের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসানো যাবে না। এতে ব্রিজের ক্ষতি হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন বলেন, ‘আমরা যেখান থেকে বালু উত্তোলন করছি তার আশেপাশে পর্যাপ্ত বালু আছে। যেটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপস্থিতিতে ফিল্ড এনালাইসিস করে উত্তোলন করছি।’
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে বলা আছে যে, আমরা সরকারি কাজে বালি উত্তোলন ও প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারব। তবে আমরা এখান থেকে বালি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছি না। জনস্বার্থে এটা ব্যবহার করা হচ্ছে বলে যোগ করেন ইউএনও।