গত কয়েক বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার যৌক্তিক দাম মেলেনি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার হাট যশোরের রাজারহাটে। ঈদ-পরবর্তী প্রথম হাট মঙ্গলবার চামড়ার জোগান ছিল কম। গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে কমে। ফলে লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
আড়তদারদের দাবি, সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কিনছেন তারা। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর লবণ ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চামড়ার দাম নিয়ে তাদের মাঝেও রয়েছে অসন্তুষ্টি।
ঈদের পর মঙ্গলবার ছিল প্রথম হাট। এদিন হাট ভালোভাবে জমেনি। তারপরও আট থেকে ১০ হাজার চামড়া আসে হাটে। বিভিন্ন জেলার ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে আনেন। কিন্তু আশানুরূপ দাম পাননি বলে অভিযোগ তাদের। বিশেষ করে ছাগলের চামড়া এক প্রকার বিনা মূল্যে দিয়ে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরেছেন তারা।
এদিন বাজারে গরুর চামড়া মানভেদে ৩০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, আর ছাগলের চামড়া ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা হয়েছে।
নড়াইল থেকে ১০০ গরুর চামড়া ও ১৩টি খাসির চামড়া নিয়ে হাটে আসেন হীরামন বিশ্বাস। তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারেননি তিনি। খাসির ১৩টি চামড়া পাঁচ টাকা দরে দাম আসে ৬৫ টাকা। শেষ পর্যন্ত তাকে ১৩টি চামড়ায় ৬০ টাকা দিয়েছেন স্থানীয় এক ক্রেতা।
দাম কম পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বাইরের ব্যাপারী না আসলে দাম বাড়ে না। ক্রেতা নেই বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এক প্রকার পানির দামে চামড়া কিনেছেন।’
নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা থেকে ৪০০ পিস গরুর চামড়া নিয়ে এসেছেন নিমাই বিশ্বাস। সবচেয়ে ভালো মানের প্রতি পিস চামড়া ১ হাজার ৫০ টাকায়, গাভির চামড়া ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি।
৪৫টি গরু ও ৪৫টি ছাগলের চামড়া নিয়ে আসেন যশোরের কেশবপুরের বিশ্বনাথ নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি গরুর ৩৫টি চামড়া ৭০০, ছয়টি ১১০০ ও চারটি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। বিশ্বনাথ ৪০ টাকা দরে ছাগলের চামড়া কিনে যথাক্রমে আট ও পাঁচ টাকায় বিক্রি করেন বলে জানান।
হতাশার সুরে ব্যবসা ছেড়ে দেবেন বললেন যশোরের কেশবপুর থেকে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ। কারণ, ৪০ টাকা দরে ছাগলের চামড়া কিনে তা বিক্রি করতে পেরেছেন যথাক্রমে আট ও পাঁচ টাকায়। ৪৫টি গরুর চামড়ার মধ্যে ৩৫টি ৭০০ টাকায়, ছয়টি ১ হাজার ১০০ ও চারটি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন তিনি।
চামড়া কিনে লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে জানান ব্যবসায়ী ফুলচান দাস। তিনি বলেন, ‘আমরা এক হাজার পিস ছাগলের চামড়া কিনেছিলাম। চামড়ায় লবণ দেয়া ছিল। বেশি টাকা দিয়ে শ্রমিক না পাওয়ায় প্রসেসিংয়ের অভাবে প্রায় ১২শ পিস চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন এই পচা চামড়া অন্যত্র নিয়ে পুঁততে হবে। তাতে আরও হাজার পাঁচেক টাকা খরচ হতে পারে।’
রাজারহাট চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন। ক্ষুদ্র বিক্রেতারা বেশি দামে চামড়া কিনলে লোকসান তো দিতে হবেই। তবে, কিছু ছাগলের চামড়া প্রসেসিংয়ের অভাবে নষ্ট হয়েছে বলে জেনেছি।’