রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, সকাল ৬:৪৮
রবিবার, ২৮ মে ২০২৩,সকাল ৬:৪৮

বুলডোজার আতঙ্কে ভারতের মুসলিমরা

আন্তজার্তিক ডেস্ক

২ জুলাই, ২০২২,

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp

১১:২৩ pm

ভারতের কাশ্মির থেকে উত্তর প্রদেশ পর্যন্ত দেশটির মুসলমানদেরকে তাদের বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এটা ভারতীয় মুসলমানদের ওপর ব্যাপক সরকারি নিপীড়নের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া দেশটির সরকার নাগরিকত্বের অধিকার থেকে মুসলিমদের বাদ দেওয়ারও চেষ্টা করছে। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের এসব কর্মকাণ্ড ইসরায়েলি মডেলের অনুকরণ বলেও দাবি করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারতে চলা এসব অত্যাচার-নিপীড়ন মূলত ফিলিস্তিনে চলা ইসরাইলি সহিংসতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের অপকর্ম ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কারণে সম্মিলিত শাস্তি হিসেবে ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে মিডল ইস্ট মনিটর নামের একটি প্রভাবশালী গণমাধ্যম দাবি করেছে, সম্প্রতি ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। এ কারণে ভারত এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বাড়ি-ঘর ধ্বংস করার মধ্যেও সাদৃশ্য দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিবিসি বলেছে, ভারতের উত্তরপ্রদেশে রাজ্যে প্রয়াগরাজ, সাহারানপুর ও কানপুরে গত কয়েক মাসে বেশ কিছু মুসলিম পরিবারের বাড়ি-ঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে এগুলো অবৈধভাবে নির্মিত। কিন্তু স্থানীয় লোকজন, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন – মুসলিমদের টার্গেট করেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই এমন শাস্তি দেয়া হচ্ছে।

হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করা ফাতিমার বাড়িও ভেঙে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ফাতিমা বলেন, ‘আমরা কেউ ভাবিনি যে আমাদের এভাবে এর জন্য মূল্য দিতে হবে।’

অপরদিকে জাভেদ মোহাম্মদের পরিবারও তাদের বাড়ি ভাঙার জন্য প্রশাসনের যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

প্রয়াগরাজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বলেছে, তারা ১০ মে তারিখে জাভেদ মোহাম্মদকে অবৈধ নির্মাণের জন্য একটি নোটিশ পাঠিয়েছিল। তাকে ২৪ মে তারিখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সামনে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু জাভেদের ছেলে ইমাম এ কথা অস্বীকার করে বলেন, বাড়িটি ভাঙার আগের রাত পর্যন্ত তাদের পরিবার কোনো নোটিশ পায়নি।

তিনি আরো বলেন, ‘তাছাড়া জমিটা আমার মায়ের নামে আছে – এটা আমাদের দাদার কাছ থেকে উপহার ছিল। আমাদের সমস্ত পানির বিল এবং ট্যাক্সের রেকর্ড আমার মায়ের নামে আসবে। কিন্তু নোটিশটি আমার বাবার নামে দেওয়া হয়েছিল।’

এ বিষয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতীয় কর্তৃপক্ষের এ ধরনের পদক্ষেপ ন্যায়ভিত্তিক নয়।’

তিনি বলেন, যদি বাড়ি-ঘর নির্মাণে কিছু ত্রুটি থাকত যা কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত পরিকল্পনার বাইরে গিয়েছিল, তবে রাজ্য পৌর আইনের অধীনে জরিমানা ধার্য করা যেত। এভাবে তারা ওই পরিবারকে নিজেদের নির্মাণের বিষয়ে ব্যাখ্যা করার সুযোগ দিতে পারত।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আলি বলেন, ‘এসব ধংসযজ্ঞের উদ্দেশ্য মুসলমানদেরকে আতঙ্কগ্রস্ত করা।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের বার্তাটি রাজ্যের সমগ্র মুসলিমদের জন্য। এর মাধ্যমে তাদের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের জন্য চাপ দেওয়া বন্ধ করতে বলা হচ্ছে।’

আনাদোলু এজেন্সি ও মিডল ইস্ট মনিটরের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও দেখা গেছে যে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর ভেঙে ফেলছে। কখনও ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শাস্তি হিসেবে এসব ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর ভাঙা হয়, কখনও ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল ও তাদের উচ্ছেদ করার জন্য তাদের বাড়ি ভাঙা হয়। মূলত, সকল আন্তর্জাতিক আইনকে লঙ্ঘন করে ইসরায়েল তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে ভারতের সাথে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনীতিক পর্যায়ে তাদের মধ্যে জোরালো বন্ধন আছে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ইসরায়েলি মডেলের অনুকরণ করছে ভারতীয় সরকার। বিশেষ করে মুসলিমদের দমন ও নিপীড়ন করতে বর্তমানে তারা ইসরাইলের দেখানো পথকেই অনুসরণ করছে।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি, মিডল ইস্ট মনিটর, বিবিসি

Related Posts

বুলডোজার আতঙ্কে ভারতের মুসলিমরা

আন্তজার্তিক ডেস্ক

২ জুলাই, ২০২২,

১১:২৩ pm

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp

ভারতের কাশ্মির থেকে উত্তর প্রদেশ পর্যন্ত দেশটির মুসলমানদেরকে তাদের বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এটা ভারতীয় মুসলমানদের ওপর ব্যাপক সরকারি নিপীড়নের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া দেশটির সরকার নাগরিকত্বের অধিকার থেকে মুসলিমদের বাদ দেওয়ারও চেষ্টা করছে। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের এসব কর্মকাণ্ড ইসরায়েলি মডেলের অনুকরণ বলেও দাবি করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারতে চলা এসব অত্যাচার-নিপীড়ন মূলত ফিলিস্তিনে চলা ইসরাইলি সহিংসতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের অপকর্ম ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কারণে সম্মিলিত শাস্তি হিসেবে ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে মিডল ইস্ট মনিটর নামের একটি প্রভাবশালী গণমাধ্যম দাবি করেছে, সম্প্রতি ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। এ কারণে ভারত এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বাড়ি-ঘর ধ্বংস করার মধ্যেও সাদৃশ্য দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিবিসি বলেছে, ভারতের উত্তরপ্রদেশে রাজ্যে প্রয়াগরাজ, সাহারানপুর ও কানপুরে গত কয়েক মাসে বেশ কিছু মুসলিম পরিবারের বাড়ি-ঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে এগুলো অবৈধভাবে নির্মিত। কিন্তু স্থানীয় লোকজন, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন – মুসলিমদের টার্গেট করেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই এমন শাস্তি দেয়া হচ্ছে।

হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করা ফাতিমার বাড়িও ভেঙে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ফাতিমা বলেন, ‘আমরা কেউ ভাবিনি যে আমাদের এভাবে এর জন্য মূল্য দিতে হবে।’

অপরদিকে জাভেদ মোহাম্মদের পরিবারও তাদের বাড়ি ভাঙার জন্য প্রশাসনের যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

প্রয়াগরাজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বলেছে, তারা ১০ মে তারিখে জাভেদ মোহাম্মদকে অবৈধ নির্মাণের জন্য একটি নোটিশ পাঠিয়েছিল। তাকে ২৪ মে তারিখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সামনে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু জাভেদের ছেলে ইমাম এ কথা অস্বীকার করে বলেন, বাড়িটি ভাঙার আগের রাত পর্যন্ত তাদের পরিবার কোনো নোটিশ পায়নি।

তিনি আরো বলেন, ‘তাছাড়া জমিটা আমার মায়ের নামে আছে – এটা আমাদের দাদার কাছ থেকে উপহার ছিল। আমাদের সমস্ত পানির বিল এবং ট্যাক্সের রেকর্ড আমার মায়ের নামে আসবে। কিন্তু নোটিশটি আমার বাবার নামে দেওয়া হয়েছিল।’

এ বিষয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতীয় কর্তৃপক্ষের এ ধরনের পদক্ষেপ ন্যায়ভিত্তিক নয়।’

তিনি বলেন, যদি বাড়ি-ঘর নির্মাণে কিছু ত্রুটি থাকত যা কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত পরিকল্পনার বাইরে গিয়েছিল, তবে রাজ্য পৌর আইনের অধীনে জরিমানা ধার্য করা যেত। এভাবে তারা ওই পরিবারকে নিজেদের নির্মাণের বিষয়ে ব্যাখ্যা করার সুযোগ দিতে পারত।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আলি বলেন, ‘এসব ধংসযজ্ঞের উদ্দেশ্য মুসলমানদেরকে আতঙ্কগ্রস্ত করা।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের বার্তাটি রাজ্যের সমগ্র মুসলিমদের জন্য। এর মাধ্যমে তাদের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের জন্য চাপ দেওয়া বন্ধ করতে বলা হচ্ছে।’

আনাদোলু এজেন্সি ও মিডল ইস্ট মনিটরের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও দেখা গেছে যে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর ভেঙে ফেলছে। কখনও ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শাস্তি হিসেবে এসব ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর ভাঙা হয়, কখনও ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল ও তাদের উচ্ছেদ করার জন্য তাদের বাড়ি ভাঙা হয়। মূলত, সকল আন্তর্জাতিক আইনকে লঙ্ঘন করে ইসরায়েল তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে ভারতের সাথে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনীতিক পর্যায়ে তাদের মধ্যে জোরালো বন্ধন আছে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ইসরায়েলি মডেলের অনুকরণ করছে ভারতীয় সরকার। বিশেষ করে মুসলিমদের দমন ও নিপীড়ন করতে বর্তমানে তারা ইসরাইলের দেখানো পথকেই অনুসরণ করছে।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি, মিডল ইস্ট মনিটর, বিবিসি

Related Posts