মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ভোর ৫:০০
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪,ভোর ৫:০০

শহীদ দিবস থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

সন্তোষ দাস

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩,

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp

৬:৫৮ pm

একুশ আমাদের গর্বের দিন। একুশ আমাদের অহংকারের দিন। জাতি হিসেবে বাঙালিরা যে বিষয়গুলি নিয়ে গর্ব করতে পারে তার মধ্যে অন্যতম একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস। বিশ্বে একমাত্র বাঙালি জাতি মাতৃভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে এবং তাকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে প্রতিষ্ঠা করেছে। এটা সারা বিশ্বের সকল ভাষাভাষিদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক এবং ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বিলুপ্তপ্রায় ভাষা টিকিয়ে রাখার পক্ষে আশাব্যাঞ্জক।

১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত শুধু আমরাই দিবসটি পালন করতাম। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দানের পর দিবসটি বিশ্বের সকল মানুষের হয়ে যায়। এতে আমাদের গর্ব ও অহংকার আরো বেড়ে যায়।

শহিদ দিবস থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এমনিতে হয়নি। এর পিছনে সর্ব প্রথম যাদের অবদান তারা হলেন, কানাডা প্রবাসী দুইজন বাঙালি যথাক্রমে-আব্দুস সালাম এবং রফিকুল ইসলাম। কাকতালীয়ভাবে নাম দুটি তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সালাম ও রফিক। ৪৭ বছর পর ১৯৯৯ সালে এই দুই সূর্য সন্তানের নামের সাথে মিল আছে এমন দুইজন প্রবাসী বাঙালি প্রথম উদ্যোগ নিলেন শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের। এই দুই প্রবাসী বাঙালির উদ্যোগের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান করেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টার ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি প্রাপ্তি ত্বরান্বিত হয়েছিল।

কানাডার ভ্যাঙকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি আব্দুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের কাছে আবেদন জানান। আবেদনটি মহাসচিবের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা হাসান ফেরদৌসের নজরে আসে। তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ জানুয়ারি আব্দুস সালাম ও রফিকুল ইসলামকে অনুরোধ করেন তাঁরা যেন জাতিসংঘের অন্য কোনো সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করেন। এর প্রেক্ষিতে তারা “মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্যা ওয়ার্ল্ড” নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এ সংগঠনে একজন ইংরেজিভাষী, একজন জার্মানভাষী, একজন ক্যান্টানিভাষী এবং একজন কাচ্চাভাষী সদস্য ছিলেন। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা আবারো কফি আনানকে একটি পত্র লেখেন। ১৯৯৯ সালে তারা ইউনেস্কোর আনা মারিয়ার সাথে দেখা করেন। আনা মারিয়া পরামর্শ দেন তাদের প্রস্তাব ৫ টি সদস্য দেশ-কানাডা, ভারত, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দ্বারা আনিত হতে হবে। এরপর বাংলাদেশ সরকারের তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত আগ্রহে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে। বাংলাদেশ সরকার প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দিতে বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ ও অনুরোধ করে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় এবং নজিরবিহীনভাবে ১৮৮ টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানায়। ফলে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়। এমনকি ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য যে পাকিস্তানের সাথে আমাদের সংগ্রাম হয়েছিল, যারা সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ নাম না জানা সূর্য সন্তানদের গুলি করে হত্যা করেছিল সেই পাকিস্তান পর্যন্ত প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানায়। এভাবে ১৮৮ দেশের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পেয়ে জাতিসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলি দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে। এভাবেই আমাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ফসল একুশ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিরল মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ ছাড়াও বর্হিবিশ্বের ভারত, পাকিস্তান, কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান প্রভৃতি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরায় বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বসবাস এবং এসব জায়গায় দিবসটি পালিত হয়। এসব জায়গায় শহীদ মিনারও আছে। একুশ ফেব্রুয়ারি প্রভাতে ওইসব মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

পাকিস্তানে সরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালিত না হলেও বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নানা আয়োজন করে থাকে। পাকিস্তান ন্যাশনাল কাউন্সিল অব দ্য আর্টস, ইন্দুস কালচারাল ফোরাম, ইকো সায়েন্স ফাউন্ডেশন, দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফোক অ্যান্ড ট্র্যাডিশনাল হেরিটেজ প্রভৃতি সংগঠন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।

২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কানাডার পার্লামেন্ট আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে স্বীকৃতি দানের প্রস্তাব উত্থাপন করে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের হোয়াট চ্যাপেলে আলতাব আলী পার্কে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি এই মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । এছাড়া পূর্ব লন্ডনের কবি নজরুল সেন্টারে বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রথম স্মারক সিলমোহর প্রকাশ করে। মুুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালির চেতনা মঞ্চ নিউউয়র্কে জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এছাড়া জ্যাকসন হাইটসে দিবসটি উপলক্ষে দুইদিন ব্যাপী বই মেলার আয়োজন করা হয়। নিউজার্সিতেও স্থায়ী শহীদ মিনার রয়েছে যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। দেশগুলি ছাড়াও সুইডেন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, জর্ডানসহ প্রভৃতি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় (সূত্র: উইকিপিডিয়া এবং প্রথম আলো, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ইং)।

লেখক : সন্তোষ দাস
প্রভাষক, সরকারি ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা ডিগ্রি কলেজ
ফকিরহাট, বাগেরহাট
ই-মেইল : santoshlipi71@gmail.com

Related Posts

শহীদ দিবস থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

সন্তোষ দাস

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩,

৬:৫৮ pm

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp

একুশ আমাদের গর্বের দিন। একুশ আমাদের অহংকারের দিন। জাতি হিসেবে বাঙালিরা যে বিষয়গুলি নিয়ে গর্ব করতে পারে তার মধ্যে অন্যতম একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস। বিশ্বে একমাত্র বাঙালি জাতি মাতৃভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে এবং তাকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে প্রতিষ্ঠা করেছে। এটা সারা বিশ্বের সকল ভাষাভাষিদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক এবং ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বিলুপ্তপ্রায় ভাষা টিকিয়ে রাখার পক্ষে আশাব্যাঞ্জক।

১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত শুধু আমরাই দিবসটি পালন করতাম। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দানের পর দিবসটি বিশ্বের সকল মানুষের হয়ে যায়। এতে আমাদের গর্ব ও অহংকার আরো বেড়ে যায়।

শহিদ দিবস থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এমনিতে হয়নি। এর পিছনে সর্ব প্রথম যাদের অবদান তারা হলেন, কানাডা প্রবাসী দুইজন বাঙালি যথাক্রমে-আব্দুস সালাম এবং রফিকুল ইসলাম। কাকতালীয়ভাবে নাম দুটি তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সালাম ও রফিক। ৪৭ বছর পর ১৯৯৯ সালে এই দুই সূর্য সন্তানের নামের সাথে মিল আছে এমন দুইজন প্রবাসী বাঙালি প্রথম উদ্যোগ নিলেন শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের। এই দুই প্রবাসী বাঙালির উদ্যোগের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান করেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টার ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি প্রাপ্তি ত্বরান্বিত হয়েছিল।

কানাডার ভ্যাঙকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি আব্দুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের কাছে আবেদন জানান। আবেদনটি মহাসচিবের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা হাসান ফেরদৌসের নজরে আসে। তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ জানুয়ারি আব্দুস সালাম ও রফিকুল ইসলামকে অনুরোধ করেন তাঁরা যেন জাতিসংঘের অন্য কোনো সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করেন। এর প্রেক্ষিতে তারা “মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্যা ওয়ার্ল্ড” নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এ সংগঠনে একজন ইংরেজিভাষী, একজন জার্মানভাষী, একজন ক্যান্টানিভাষী এবং একজন কাচ্চাভাষী সদস্য ছিলেন। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা আবারো কফি আনানকে একটি পত্র লেখেন। ১৯৯৯ সালে তারা ইউনেস্কোর আনা মারিয়ার সাথে দেখা করেন। আনা মারিয়া পরামর্শ দেন তাদের প্রস্তাব ৫ টি সদস্য দেশ-কানাডা, ভারত, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দ্বারা আনিত হতে হবে। এরপর বাংলাদেশ সরকারের তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত আগ্রহে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে। বাংলাদেশ সরকার প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দিতে বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ ও অনুরোধ করে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় এবং নজিরবিহীনভাবে ১৮৮ টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানায়। ফলে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়। এমনকি ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য যে পাকিস্তানের সাথে আমাদের সংগ্রাম হয়েছিল, যারা সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ নাম না জানা সূর্য সন্তানদের গুলি করে হত্যা করেছিল সেই পাকিস্তান পর্যন্ত প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানায়। এভাবে ১৮৮ দেশের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পেয়ে জাতিসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলি দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে। এভাবেই আমাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ফসল একুশ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিরল মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ ছাড়াও বর্হিবিশ্বের ভারত, পাকিস্তান, কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান প্রভৃতি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরায় বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বসবাস এবং এসব জায়গায় দিবসটি পালিত হয়। এসব জায়গায় শহীদ মিনারও আছে। একুশ ফেব্রুয়ারি প্রভাতে ওইসব মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

পাকিস্তানে সরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালিত না হলেও বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নানা আয়োজন করে থাকে। পাকিস্তান ন্যাশনাল কাউন্সিল অব দ্য আর্টস, ইন্দুস কালচারাল ফোরাম, ইকো সায়েন্স ফাউন্ডেশন, দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফোক অ্যান্ড ট্র্যাডিশনাল হেরিটেজ প্রভৃতি সংগঠন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।

২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কানাডার পার্লামেন্ট আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে স্বীকৃতি দানের প্রস্তাব উত্থাপন করে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের হোয়াট চ্যাপেলে আলতাব আলী পার্কে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি এই মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । এছাড়া পূর্ব লন্ডনের কবি নজরুল সেন্টারে বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রথম স্মারক সিলমোহর প্রকাশ করে। মুুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালির চেতনা মঞ্চ নিউউয়র্কে জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এছাড়া জ্যাকসন হাইটসে দিবসটি উপলক্ষে দুইদিন ব্যাপী বই মেলার আয়োজন করা হয়। নিউজার্সিতেও স্থায়ী শহীদ মিনার রয়েছে যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। দেশগুলি ছাড়াও সুইডেন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, জর্ডানসহ প্রভৃতি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় (সূত্র: উইকিপিডিয়া এবং প্রথম আলো, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ইং)।

লেখক : সন্তোষ দাস
প্রভাষক, সরকারি ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা ডিগ্রি কলেজ
ফকিরহাট, বাগেরহাট
ই-মেইল : santoshlipi71@gmail.com

Related Posts