মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, রাত ১২:৪০
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪,রাত ১২:৪০

যার মা আছে, সে কখনো গরীব নয়

এহসান কলিন্স

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩,

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp

১০:২৪ pm

কিছুদিন আগে মা’কে পাহাড় সমুদ্র ঝর্ণা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম, মার হাত ধরে যখন অনেক কষ্টে পাহাড়ে উঠছিলাম, সমুদ্রের বালিতে হাঁটছিলাম, তখন আমার মায়ের চোখেমুখে অদ্ভুত এক অনুভূতি দেখতে পাচ্ছিলাম আমি। তখনি আমার মনটা আনন্দে ভরে উঠছিল।

মাঝে মাঝে মনে হয়, জীবনে এত বড় হলাম কি-ই বা করলাম মা-বাবার জন্য! আমার মনে পড়ে, ক্লাস ফাইভ, সিক্স থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আমার পড়ালেখার রুটিন ছিলো মাঝরাতে। কারণ সন্ধ্যা হলেই আমার প্রচন্ড ঘুম পেত। মা বলতো, এই রাত্রে সন্ধ্যায় তুই ঘুমিয়ে পর, তারপর রাত একটা-দুটোর সময় যখন ঘুম ভাঙতো তখন মা আমাকে ডেকে তুলতো, তারপর ভোর রাত পর্যন্ত আমি পড়তাম। আর মা আমার পাশে পায়ে মাথা গুঁজে আমার পড়া পাহারা দিতো ভোর রাত পর্যন্ত। ঠিক এভাবেই মা আমার দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়িয়েছেন। তারপর এইচএসসি থেকে অনার্স পড়া পর্যন্ত, তিন ভাইয়ের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বেশি বেশি পেয়েছি আমার মায়ের কাছ থেকে। খুব বেশি বেশি-ই আবদার করতাম আমি! আর সেই আবদার না মেটানো পর্যন্ত খুব মন খারাপ করেই থাকতাম। মা যতটা পারতো সেই আবদারগুলো মেটানোর চেষ্টা করতো।

যখন বাসা ছেড়ে হোস্টেলে থেকে পড়তাম, যতবার বিদায় নিতাম, কতো খাবারের পোঁটলা যে পাঠিয়ে দিত, বানিয়ে বানিয়ে রেখে দিত। রাগ করতাম, ব্যাগ ভারি হবে বলে নিতে রাজি হতাম না। আর মা আমার হাত ধরে বলতো, বাবা না ভালো, একটু নিয়ে যা, ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নিস! আহারে মা আমাদের!!!

১৯৯৯ সালে, একুশের বইমেলায় যখন প্রথম একটি কাব্যগ্রন্থ বের হলো আমার, আমার মা ও আব্বাজী সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিল। ব‌ই ছাপানোর টাকাটি ও মা-ই দিয়েছিলো কত যে কষ্ট করে! পরে অবশ্য দিয়েও দিয়েছিলাম।

২০০৫ সালে, উচ্চশিক্ষার জন্য ব্রিটিশ বিমান আমাকে নিয়ে যখন আকাশে উড়াল দিবে লন্ডনের উদ্দেশে, ঠিক সেই মুহূর্ত আমাকে ধরে আমার মায়ে’র কি যে কান্না, শুনেছিলাম, হিথ্রো বিমানবন্দরে না পৌঁছানো পর্যন্ত মা সেই কয়েক ঘন্টা সারাক্ষণ আয়তুল কুরসি পড়ছিল যেন আমি নিরাপদে পৌঁছাই।

এখনো আমাদের এই মায়েরা কতো যে মিছেমিছি ভালো থাকার কথা বলে, আমাদেরকে খুশি রাখবার জন্য, তা হয়তো শুধু আমাদের সব মায়েরাই জানে। পৃথিবীর সকল মায়েরা যেন অনেক অনেক ভালো থাকে!

(পুনশ্চ: এই প্রথম আমি টের পেলাম এই ছোট্ট লেখাটি লিখতে গিয়ে আমার দু’চোখ জলে টলমল করছে।)

এহসান কলিন্স
লেখক ও কথা সাহিত্যিক
তরু মাধবী, ঢাকা
ই-মেইল: ahasan.collins@gmail.com

Related Posts

যার মা আছে, সে কখনো গরীব নয়

এহসান কলিন্স

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩,

১০:২৪ pm

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp

কিছুদিন আগে মা’কে পাহাড় সমুদ্র ঝর্ণা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম, মার হাত ধরে যখন অনেক কষ্টে পাহাড়ে উঠছিলাম, সমুদ্রের বালিতে হাঁটছিলাম, তখন আমার মায়ের চোখেমুখে অদ্ভুত এক অনুভূতি দেখতে পাচ্ছিলাম আমি। তখনি আমার মনটা আনন্দে ভরে উঠছিল।

মাঝে মাঝে মনে হয়, জীবনে এত বড় হলাম কি-ই বা করলাম মা-বাবার জন্য! আমার মনে পড়ে, ক্লাস ফাইভ, সিক্স থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আমার পড়ালেখার রুটিন ছিলো মাঝরাতে। কারণ সন্ধ্যা হলেই আমার প্রচন্ড ঘুম পেত। মা বলতো, এই রাত্রে সন্ধ্যায় তুই ঘুমিয়ে পর, তারপর রাত একটা-দুটোর সময় যখন ঘুম ভাঙতো তখন মা আমাকে ডেকে তুলতো, তারপর ভোর রাত পর্যন্ত আমি পড়তাম। আর মা আমার পাশে পায়ে মাথা গুঁজে আমার পড়া পাহারা দিতো ভোর রাত পর্যন্ত। ঠিক এভাবেই মা আমার দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়িয়েছেন। তারপর এইচএসসি থেকে অনার্স পড়া পর্যন্ত, তিন ভাইয়ের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বেশি বেশি পেয়েছি আমার মায়ের কাছ থেকে। খুব বেশি বেশি-ই আবদার করতাম আমি! আর সেই আবদার না মেটানো পর্যন্ত খুব মন খারাপ করেই থাকতাম। মা যতটা পারতো সেই আবদারগুলো মেটানোর চেষ্টা করতো।

যখন বাসা ছেড়ে হোস্টেলে থেকে পড়তাম, যতবার বিদায় নিতাম, কতো খাবারের পোঁটলা যে পাঠিয়ে দিত, বানিয়ে বানিয়ে রেখে দিত। রাগ করতাম, ব্যাগ ভারি হবে বলে নিতে রাজি হতাম না। আর মা আমার হাত ধরে বলতো, বাবা না ভালো, একটু নিয়ে যা, ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নিস! আহারে মা আমাদের!!!

১৯৯৯ সালে, একুশের বইমেলায় যখন প্রথম একটি কাব্যগ্রন্থ বের হলো আমার, আমার মা ও আব্বাজী সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিল। ব‌ই ছাপানোর টাকাটি ও মা-ই দিয়েছিলো কত যে কষ্ট করে! পরে অবশ্য দিয়েও দিয়েছিলাম।

২০০৫ সালে, উচ্চশিক্ষার জন্য ব্রিটিশ বিমান আমাকে নিয়ে যখন আকাশে উড়াল দিবে লন্ডনের উদ্দেশে, ঠিক সেই মুহূর্ত আমাকে ধরে আমার মায়ে’র কি যে কান্না, শুনেছিলাম, হিথ্রো বিমানবন্দরে না পৌঁছানো পর্যন্ত মা সেই কয়েক ঘন্টা সারাক্ষণ আয়তুল কুরসি পড়ছিল যেন আমি নিরাপদে পৌঁছাই।

এখনো আমাদের এই মায়েরা কতো যে মিছেমিছি ভালো থাকার কথা বলে, আমাদেরকে খুশি রাখবার জন্য, তা হয়তো শুধু আমাদের সব মায়েরাই জানে। পৃথিবীর সকল মায়েরা যেন অনেক অনেক ভালো থাকে!

(পুনশ্চ: এই প্রথম আমি টের পেলাম এই ছোট্ট লেখাটি লিখতে গিয়ে আমার দু’চোখ জলে টলমল করছে।)

এহসান কলিন্স
লেখক ও কথা সাহিত্যিক
তরু মাধবী, ঢাকা
ই-মেইল: ahasan.collins@gmail.com

Related Posts