বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কুমার নদের সংযোগ খাল খনন কাজে বাধা দেওয়ায় ১৪শ’ একর জমির ফসল নিয়ে অনিশ্চিতের মধ্যে রয়েছে এলাকার কৃষকরা।বৃষ্টি হলেই জমিগুলোর ফসল পানি বেঁধে নষ্ট হয়ে যায়। এ সকল জমির পানি নেমে যাওয়ার একমাত্র উপায় কুন্ডু রামদিয়া কুমার নদের সংযোগ খাল। খালটি খনন কাজে বাঁধা পড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার কৃষক পরিবার।
উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের কাদিরদী কুন্ডু রামদিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুমার নদের সংযোগ রামদিয়া-বামনগাড়িয়া বিল পর্যন্ত এসে মিশেছে। রামদিয়া, কুন্ডু রামদিয়া, কাদিরদীসহ কয়েকটি বিলের পানি ওই খাল দিয়ে নেমে যায়। খালের শেষ মাথায় বামনগাড়িয়া বিলে মাটি ভরাট করে খালটি দখল করেন ওই এলাকার ইউনুচ শেখ নামে এক ব্যক্তি, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিএডিসি বাস্তবায়িত বৃহত্তর ফরিদপুর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প ওই খালটি সংস্কার কাজের বাজেট হয়। খালটির খনন কাজ শুরু হয়ে বামনগাড়িয়া বিলের কাছে পৌছালে খনন কাজে বাঁধা দেয় ইউনুচ শেখ। ইউনুচ শেখের বাঁধার কারণে ১৩০ মিটার খাল খনন কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
ওই এলাকার হাসমত ফকির (৫২), মজিবর রহমান (৫০), রুস্তুম শেখ (৪০) ও চুন্নু শেখ (৫০) জানান, খালটি আশি বছরের পুরানো। আশপাশের বেশ কয়েকটি বিলের পানি এই খাল দিয়ে নেমে যেত। খালের শেষ দিকে ইউনুচ শেখসহ অনেকেরই জমি রয়েছে। শুধু ইউনুচ শেখ তার খালের মধ্যে জমিটুকু মাটি দিয়ে ভরাট করার কারণে বিলে পানি বেঁধে মাঠের ফসল তলিয়ে যায়। খনন কাজে যে ১৩০ মিটার বাঁধা পড়েছে তার মধ্যে পাঁচ জনের জমি রয়েছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রথমদিকে ইউনুচ শেখ খাল কাটতে বলেছিলেন। কাটা শুরু করলে তিনি বাঁধা দেন। খালটি না কাটলে বামনগাড়িয়া বিলসহ আশপাশের কয়েকটি বিলের জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যাবে। প্রায় ১৪শ’ একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কৃষকদের স্বার্থে খালটি খনন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে তারা আরো জানান। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে, খাল কাটা নিয়ে মারামারির ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকায় খনন কাজে বাধা দেওয়া ব্যক্তি ইউনুচ শেখের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার স্ত্রী মুক্তি বেগম বলেন, আমাদের যে জমিতে খাল কাটা হচ্ছে সেটা খালের কিংবা সরকারি জমি নয়। এটা আমাদের ব্যক্তি মালিকানা জমি। চাপ প্রয়োগ করে খাল কাটার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন মহল। ব্যক্তি মালিকানার জমি ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়াই খাল কাটার বাঁধা দেওয়ায় তার স্বামীর উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানান।
সংশ্লিষ্ট খালটি খনন কাজের দায়িত্বে থাকা বিএডিসির কর্মকর্তা প্রশান্ত রানা বলেন, খাল খনন বরাদ্দের মধ্যে ১৩০ মিটার বাদে বাকিটুকু খনন সম্পন্ন করা হয়েছে। ১৩০ মিটার খননে বাধা পড়ায় কাটা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কাজটি শেষ করার জন্য সকল প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হচ্ছে।
আজ শনিবার সাতৈর ইউপি চেয়ারম্যান রাফিউল আলম মিন্টু চারিদিককে বলেন, খালের উত্তর ও দক্ষিণ দুইপাশে কুমার নদের সংযোগ। খনন কাজে যে ১৩০ মিটার বাঁধা পড়েছে, ওই জায়গায় আরো চারজনের জমি রয়েছে। এলাকার কৃষকদের স্বার্থে ইউনুচ শেখ বাদে চারজনই খালটি কাটার পক্ষে। ইউনুচ শেখ বাঁধা দেওয়ায় খালের বাকি অংশ কাটা বন্ধ রয়েছে। খালের বাকি অংশ কাটা না হলে প্রায় ১৪শ’ একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।