নিষেধাজ্ঞা শেষে বাগেরহাটের শরণখোলার বলেশ্বর নদে জেলেদেরে জালে ধরা পড়ছে ডিমওয়ালা ইলিশ! শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে উপজেলা সদরের রায়েন্দা মাছ বাজারে ওঠা বেশিরভাগ ইলিশের পেটেই দেখা গেছে ডিম। স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেরা বলছেন, জালে বড় আকারের যেসব ইলিশ ধরা পড়ছে তার মধ্যে ৭৫ ভাগ মাছের পেটেই ডিম রয়েছে। প্রজননের সময় আরো কমপক্ষে ১৫ দিন পিছিয়ে দিলে এসব মাছ ডিম ছাড়তে পারতো। তবে, সমুদ্রের ইলিশের পেটে ডিম আছে কিনা তা জানা যায়নি। এক সপ্তাহ পর সমুদ্র থেকে ট্রলার এসে জানা যাবে।
মৎস্য বিভাগ বলছে, ২২দিনে কি পরিমাণ ইলিশ ডিম ছেড়েছে তা এখই বলা যাচ্ছে না। ৭৫ ভাগ ইলিশের পেটে ডিম থাকাটা হতাশার বিষয়। আরো দুই-চারদিন না গেলে বোঝা যাবে না। এব্যাপারে গবেষণা না করে সঠিক কিছু বলা যাচ্ছে না।
মা’ইলিশ রক্ষা ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ৭ অক্টোর থেকে ২২ দিন প্রধান প্রজনন মৌসুম হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এজন্য বঙ্গোপসাগরসহ দেশের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকে মাছ ধরা। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই মাছ ধরা শুরু হয় স্থানীয় নদ-নদীতে। ফিশিং ট্রলার নিয়ে ওই রাতেই সাগরে যাত্রা করেন জেলেরা। শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকাল থেকে জাল ফেলা শুরু হয়েছে সাগরেও।
উপজেলার সদরের রায়েন্দা মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাতে বলেশ্বর নদে জাল ফেলে ধরা ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সকালে বাজারে আনা হয়েছে বিক্রির জন্য। বিক্রেতাদের কয়েকটি ডালায় ছোট-বড় মিলিয়ে এক মনের বেশি হবে ইলিশ। এর মধ্যে বড় আকারের ইলিশের সংখ্যা ২০টির মতো। যার একেকটির ওজন হবে এক কেজি থেকে সোয়া কেজি। বড় আকারের এসব ইলিশের মধ্যে একটি বাদে বাকি সবগুলোর পেটেই ডিম বোঝাই। ইলিশের পেটে ডিম দেখে ক্রেতারাও অবাক হচ্ছেন। নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ নিয়েও আলোচনা করতে শোনা গেছে ক্রেতাদের।
মৎস্য ব্যবসায়ী আ. হালিম খান, খোকন হাওলাদার, সোহাগ হাওলাদার ও সোহেল হাওলাদার জানান, ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। অথচ প্রায় ইলিশের পেটেই ডিম রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় আরো ১০-১৫ দিন পিছিয়ে দিলে হয়তো ঠিক হতো। তাহলে এসব ইলিশে পরিপূর্ণভাবে ডিম ছাড়ার সময় পেতো।
শরণখোলা সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, আমাদের বলেশ্বর নদে যেসব ইলিশ ধরা পড়ছে তার ৭৫ থেকে ৮০ ভাগের পেটেই ডিম রয়েছে। প্রজননের সময় নির্ধারণ সঠিক না হওয়ায় বেশির ভাগ মা’ ইলিশ ডিম ছাড়তে পারেনি। নিষেধাজ্ঞার সময় আরো পিছিয়ে দেওয়া উচিৎ।
আবুল হোসেন আরো বলেন, শরণখোলায় তিন শতাধিক সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে এর মধ্য থেকে দুই শ’র মতো ট্রলার সাগরে রওনা হয়ে গেছে। বেশ কিছু ট্রলার এখনো ডকে মেরামতে রয়েছে। তাছাড়া বেগোন (মরাকটাল) হওয়ায় প্রস্তুতি নিয়েও অনেক ট্রলার ছেড়ে যায়নি। যেসব ট্রলার সাগরে গেছে সেগুলো এক সপ্তাহর মধ্যে ফিরে আসবে। তখন সাগরের ইলিশের ডিম ছাড়ার বিষয়টি জানা যাবে।
এব্যাপারে শরণখোলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের মাধ্যমে বেশিরভাগ ইলিশের পেটে ডিম থাকার কথা শুনেছি। আরো দুই-চারদিন জেলেদের জালে ধরা পড়া ইলিশ পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। নিষেধাজ্ঞা শেষে স্থানীয় নদ-নদীতে ধরা পড়া বেশিরভা ইলিশের পেটে ডিম থাকার তথ্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএফআরআই) পাঠানো হবে।