মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, রাত ১২:৪২
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪,রাত ১২:৪২

পদ্মা সেতু ঘিরে কুয়াকাটায় নতুন সম্ভাবনা

২৫ জুন, ২০২২,

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp

৩:৫২ pm

এইচ এম হুমায়ুন কবির, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি পর্যটন কেন্দ্র পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা। এখানে রয়েছে একই স্থান থেকে সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত দেখার পৃথিবীর একমাত্র সৈকত। তাই কুয়াকাটা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন চোখে পড়ার মতো। ১৯৯৮ সালে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষনার পর সারা বিশ্বের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে কুয়াকাটা। বিনিয়োগকারীরা ও হোটেল-মোটেল নির্মাণ করে কুয়াকাটাকে সৌন্দর্যের নগরী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সৈকত। পদ্মা সেতু ঘিরে কুয়াকাটায় এখন নতুন সম্ভাবনা।

গত দুই দশকের বেশি সময়ে এখানে আগমন ঘটে দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকের। কিন্তু এখানে আসতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাঙ্গা সড়ক আর একাধিক সেতু পার করে কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের জন্য ছিল নানা রকম বিড়ম্বনা। পদ্মা সেতু চালু কারনে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে স্থবির হয়ে থাকা নামি-দামি বিনিয়োগকারীদের স্থাপত্য। যা পর্যটকদের সেবার মান বাড়াবে আগের থেকে কয়েকগুণ। অবসান ঘটবে কুয়াকাটায় পৌঁছানোর সকল ধরনের প্রতিবন্ধকতা এমনটাই প্রত্যাশা পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকলের। নদী বেষ্টিত আধুনিক যুগের সুবিধা থেকে পিছিয়ে থাকা জেলার নাম ছিল পটুয়াখালী। স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিনাঞ্চলের পর্যটন শিল্পের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে সাগরকন্যা কুয়াকাটার দূরত্ব মাত্র ২৬৫ কিলোমিটার। যা ঢাকা থেকে কক্্রবাজারের চেয়ে প্রায় ১৫০কিমি কম। অতীত ঢাকা থেকে কুয়াকাটা সড়ক পথে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত আসতে ১৪টি ফেরি ছিল।

দীর্ঘ দিন থেকে বরিশাল বিভাগের মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়ে এসব ফেরি পারাপার হয়ে রাজধানীতে আসা যাওয়া করতো। পদ্মা সেতু যাত্রা মধ্য দিয়ে এই পথে সেই ফেরি যুগের অবসান হলো। আর এ সেতুকে ঘিরে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা নয়, পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যে ও ইতো মধ্যেই পর্যটন কেন্দ্র রুপ নিয়েছে কুয়াকাটা। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিশাল সমুদ্রের নীল জলরাশি দোলনার মতো যখন দুলে দুলে তীরে আসতে থাকে তখন পূর্ব আকাশে সূর্যে হালকা রক্তিম বৃত্তটা ক্রমেই স্পষ্ট হতে থাকে। তখন প্রথম সূর্যোদয়ের আলোতে আলোতিক হয়ে পাল্টে যায় কুয়াকাটার সমুদ্রের নীলাভ জল বর্ন। লাল বর্ণ সূর্যটা অল্পক্ষণের মধ্যেই পূর্ণ বৃত্তে রূপ নেয়। এই নতুন সূর্য পুব আকাশে নিয়ে আসে এক অপরূপ শোভা। আকাশের ক্যানভাসে সদ্য ওঠা সূর্য, নিচে সমুদ্রের নীল জল, সুদীর্ঘ বেলাভূমি আর পাশে ঘন সবুজ ঝাউবনের সমন্বয়ে কুয়াকাটা সৈকত ফিরে পায় অপরূপ সৌন্দর্য। যেখানে দাঁড়িয়ে সুর্যোদয় সুর্যাস্তের অপরুপ ও নয়নাভিরাম এবং মনভোলানো দৃশ্য ও সৈকতের দাঁড়ালে চোখে পড়বে দিগন্ত জোড়া আকাশ আর সমুদ্রর রাশি রাশি নীল জল আর সমুদ্রের নীল জলের তরঙ্গায়িত ঢেউ কাঁচ ভাঙ্গা ঝন ঝন শব্দের মত আছরে পড়ছে কিনারায় ও উড়ে যাচ্ছে সাদা গাংচিলের দল এদিক ওদিক মাছ শিকারের জন্য লড়াকু জেলেরা ট্রলারে ও নৌকায় ছুটে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রে তা উপভোগ করা যায়।

সৈকতে আগত এ সকল পর্যটকরা সাগরের নোনা জলে গাঁ ভাসিয়ে আনন্দ উন্মাদনায় মেতেছেন। কুয়াকাটা ১৪০টি হোটেল, কাঁকড়া ও ফিশ ফ্লাইয়ের দোকান ২৩টি, শুটকি দোকান ২৮টি, পোষাকের দোকান ২০টি, ছবি প্রিন্ট ও এডিটিং স্টুডি ১০টি, বার্মিজ আটার ও চকলেট দোকান ৮০টি, ঝিনকের দোকান ১২০টি রয়েছে। যেখানে আসলে সাগরের নীল জলরাশি আর ঢেউয়ের গর্জন পর্যটকদের মন কেড়ে নেয় প্রতিটি মুহূর্তে।

সারা দেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে এখনই ঝুঁকছে পায়রার দিকে। বন্দরের আশপাশ এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার হিড়িক পড়েছে। এর পাশাপাশি খাদ্য ও মাছে উদ্বৃত্ত পটুয়াখালী থেকে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে। দক্ষিণের অন্য সব জেলার মতো পটুয়াখালীবাসীর তরও আর সইছে না। এই সেতুর এখানকার পর্যটনের পাশাপাশি মৎস্য, খাদ্যশস্য আর পায়রা সমুদ্রবন্দরের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। চট্টগ্রাম আর মোংলার তুলনায় সড়কপথে ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য আনা-নেয়া খুব সহজ হবে পায়রা দিয়ে। সেই প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে পায়রা কর্তৃপক্ষ।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা যাবে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙা হবে।

ঢাকা গাজীপুর থেকে আগত পর্যটক দম্পতি সারা মনি জানান, কুয়াকাটায় ভ্রমণের জন্য সবসময়ই মনটা প্র্স্তুত থাকে। তবে পদ্মা নদীর মাওয়া ফেরি তাদের মূল প্রতিবন্ধকতা হিসাবে কাজ করতো। এবার পদ্মা সেতু তাঁদের আর কোনো বাধা থাকবে না।

পটুয়াখালী কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের উপপরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন জানান, জেলাভিত্তিক আবাদ ও উৎপাদনে পটুয়াখালী বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। এক মৌসুমে চাল উৎপাদন ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৭৯৮ টন। এ জেলায় মানুষের প্রয়োজন ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৫ টন। উদ্বৃত্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৩৩ টন চাল অন্য জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। খাদ্যশস্য উৎপাদনে পটুয়াখালীর সুনাম আছে। দেশে উৎপাদিত মুগ ডালের অর্ধেকেরও বেশি হয় এখানে। দেড় হাজার কোটি টাকার তরমুজ আর সমপরিমাণ টাকার আমন ধান বিক্রি হয় এ জেলায়। পদ্মা সেতু চালু হলে এসব পণ্য ঢাকায় পরিবহন অনেক সহজ হবে। চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ৮৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টন মুগ ডাল উৎপন্ন হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এর সিংহভাগই অন্য জেলায় পাঠানো হয়েছে।চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ৩০ হাজার ৫০ টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। সারা দেশে তরমুজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে পটুয়াখালী জেলা প্রথম স্থানে।

তিনি আরো বলেন, ‘চাল, মুগ ডাল আর তরমুজ সরবরাহের ক্ষেত্রে ফেরিঘাটে নানা জটিলতা সৃষ্টি হতো বিগত বছরে। তরমুজ পচে যেত, দাগ পড়ে যেত। এতে ব্যবসায়ীরা ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন। যে কারণে ঢাকাসহ অন্যান্য বাজারে পটুয়াখালীর তরমুজের মূল্য থাকত চড়া। ভোক্তারা অনেক বেশি মূল্য দিয়ে তরমুজ ক্রয় করত। কিন্তু এখন আর সেই দুশ্চিন্তা নাই। মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে থাকবে এ এলাকার তরমুজ। ফলে প্রান্তিক চাষিরা ফসল বিক্রি করে তাদের ন্যায্যমূল্য নিতে পারবে। এখানকার মুগ ডাল দেশের বাইরে বিশেষ করে চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। এই রুটের ফেরির ভোগান্তিতে ব্যবসায়ীরা ছিলেন অতিষ্ঠ। কিন্তু আগামী মৌসুমে এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।’

পটুয়াখালীর সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, সাগর ও নদ-নদী থেকে ২০২০-২০২১ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৭৯ টন দেশি, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ ধরা হয়েছে। জেলায় চাহিদা ৩৬ হাজার ৯৪৩ টন। বাকি ৮৭ হাজার ৩৬ টন মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হয়ে থাকে। ‘ফেরিঘাটে ট্রাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকায় বরফ গলে মাছ নষ্ট হয়ে যেত। বিশেষ করে মাওয়া ঘাটে এ দুর্ভোগ ছিল চরমে। এখন এসব মাছ ঢাকাবাসীর হাতের নাগালে থাকবে। মৎস্য বন্দর মহিপুর-আলীপুর বন্দর থেকে পাঁচ/ ছয় ঘণ্টায় ঢাকার বাজারে চলে যাবে এগুলো। এতে বজায় থাকবে প্রোটিনসহ মাছের গুণগত মান। সারা দেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে এখনই ঝুঁকছেন পায়রার দিকে। বন্দরের আশপাশ এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার হিড়িক পড়েছে।

কুয়াকাটা ট্যুরিজম গাইড এসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু জানান, ইতিমধ্যে আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি। পদ্মা সেতু কারনে বর্তমানের থেকে কয়েকগুণ বেশি পর্যটক কুয়াকাটায় আসবে। সেজন্য আমরা ট্যুর গাইডদের পরিধি বাড়াচ্ছি। তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি, সৈকতের সৌন্দর্যকে আরও বাড়ানোর চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছি।

ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, সেতু চালু হলে কুয়াকাটার একটি আমুল পরিবর্তন হবে। ঢাকা-কুয়াকাটার দূরত্বটা কমে যাওয়ার কারণে ১০-১২ ঘণ্টার পথ ৫-৬ ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে যে কারণে বর্তমানের থেকে কয়েকগুণ পর্যটক বেশি আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

কুয়াকাটার একাধিক মোটেল ও হোটেল এর ম্যানেজার জানান, ঢাকা-কুয়াকাটার দূরত্বটা কমে যাওয়ার কারণে বর্তমানের থেকে কয়েকগুণ পর্যটক বেশি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কুয়াকাটাকে ঘিরে সরকারের মাস্টার প্লান রয়েছে। কিন্তু এ মাস্টারপ্লানে কি কি উন্নয়ন কর্মকান্ড- রয়েছে তা এখনও জানতে পারছেনা কুয়াকাটায় বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা। সরকার শতশত ব্যবসায়ীকে সৈকত এলাকা থেকে উচ্ছেদ করলেও মূল সৈকতে এখনও কোন পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। এমনকি পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্তরাও এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। বর্ষায় মূল সৈকত সাগরের ভাঙ্গনে ক্রমশই ছোট হচ্ছে। কিন্তু সৈকত রক্ষায় কিছু বালু ভর্তি ব্যাগ ফেলা হলেও উন্নয়ন বলতে ওই পর্যন্তই।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, গত দুই দশকের বেশি সময়ে এখানে আগমন ঘটে দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকের। কিন্তু এখানে আসতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাঙ্গা সড়ক আর একাধিক সেতু পার করে কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের জন্য ছিল নানা রকম বিড়ম্বনা। পদ্মা সেতু ঘিরে কুয়াকাটায় বর্তমানের  কয়েকগুণ পর্যটক বেশি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সারা বছর কুয়াকাটায় আজকের দিনের মতো এ রকম পর্যটক থাকলে আমাদের ভালো হয়।

তারা আরও জানান, বাগান ও ঝাউ বাগান এলাকা রক্ষারও এখনই সময়। কেননা বর্ষা হলেইতো ভাঙ্গন শুরু হয়। প্রতিবছর কুয়াকাটায় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সৈকত পরিস্কার পচ্ছিন্নতা অভিযান, ভাঙ্গার রক্ষায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। কিন্তু যে মূল সৈকতকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর কুয়াকাটায় ভীর করে সৈই সৈকত এখনও রয়ে গেছে অরক্ষিত।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মো. মোতালেব শরিফ বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে কুয়াকাটায় এখন নতুন সম্ভাবনা। কিন্তু এখানে আসতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাঙ্গা সড়ক আর একাধিক সেতু পার করে কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের জন্য ছিল নানা রকম বিড়ম্বনা। কুয়াকাটায় এখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক অবস্থান করবে বলে তিনি জানান।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট জোনের সহকারি পুলিশ সুপার আ. খালেক বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারনে কুয়াকাটায় বিপুল পরিমাণ পর্যটকের সমাবেশ ঘটবে। আমরা সকল পর্যটকের সবধরনের নিরাপত্তা দিতে বদ্ধ পরিকর।

পৌর মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার জানান, পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের সেতু। আমরা কুয়াকাটাবাসী কখনও ভাবিনি যে পদ্মা সেতু হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং দেশী বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে পদ্মাসেতু আজ বাস্ততা। পদ্মাসেতু কুয়াকাটার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন এনে দিবে। পর্যটন ভিত্তিক বিনিয়োগ বাড়বে।

পায়রা সমুদ্র বন্দরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘পদ্মা সেতু আর পায়রা সমুদ্রবন্দর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বন্দরের অন্যতম শর্ত সড়ক সংযোগ, যেটি নিয়ে এতদিন জটিলতা ছিল। কিন্তু এখন এই সমস্যা আর থাকছে না। এখানে পণ্য খালাসের জন্য ফোর লেনের সড়ক অনেক আগেই হয়েছে। পায়রা হবে একটি আধুনিক বন্দর। ইতোমধ্যে মূল টার্মিনাল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। নাব্যতা সমস্যা দূর করতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজও চলছে। এই বন্দরে দেশি, বিদেশি অনেক জাহাজের আগমন ঘটবে। এতে আমাদের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।’

তিনি আরও জানান, বর্তমানে কুয়াকাটায় রাত্রিযাপনের ধারণ ক্ষমতা ১৫ হাজার রয়েছে। কয়েকগুণ পর্যটক হওয়ার সম্ভাবনায় বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ফাইভস্টার-্রথ্রিস্টার মানের হোটেল তৈরিতে অনেকে কাজ শুরু করছে।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরের দূরত্বে সমান হলেও মোহাম্মদ সোয়াহেলের ধারণা, ব্যবসায়ীরা পায়রাকে বেছে নেবেন বন্দরের সুবিধা ও সড়কপথে যাতায়াত সহজতর বলে। সড়কে চাপ কম বলে চট্টগ্রামের চেয়ে দ্রুততর যাতায়াত করা যাবে।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. কামাল জানান, পদ্মা সেতু ঘিরে কুয়াকাটায় রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ উন্নয়নের আশার আলো দেখছে। এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক চাকা সচল হবে।

Related Posts

পদ্মা সেতু ঘিরে কুয়াকাটায় নতুন সম্ভাবনা

২৫ জুন, ২০২২,

৩:৫২ pm

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp

এইচ এম হুমায়ুন কবির, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি পর্যটন কেন্দ্র পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা। এখানে রয়েছে একই স্থান থেকে সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত দেখার পৃথিবীর একমাত্র সৈকত। তাই কুয়াকাটা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন চোখে পড়ার মতো। ১৯৯৮ সালে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষনার পর সারা বিশ্বের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে কুয়াকাটা। বিনিয়োগকারীরা ও হোটেল-মোটেল নির্মাণ করে কুয়াকাটাকে সৌন্দর্যের নগরী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সৈকত। পদ্মা সেতু ঘিরে কুয়াকাটায় এখন নতুন সম্ভাবনা।

গত দুই দশকের বেশি সময়ে এখানে আগমন ঘটে দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকের। কিন্তু এখানে আসতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাঙ্গা সড়ক আর একাধিক সেতু পার করে কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের জন্য ছিল নানা রকম বিড়ম্বনা। পদ্মা সেতু চালু কারনে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে স্থবির হয়ে থাকা নামি-দামি বিনিয়োগকারীদের স্থাপত্য। যা পর্যটকদের সেবার মান বাড়াবে আগের থেকে কয়েকগুণ। অবসান ঘটবে কুয়াকাটায় পৌঁছানোর সকল ধরনের প্রতিবন্ধকতা এমনটাই প্রত্যাশা পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকলের। নদী বেষ্টিত আধুনিক যুগের সুবিধা থেকে পিছিয়ে থাকা জেলার নাম ছিল পটুয়াখালী। স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিনাঞ্চলের পর্যটন শিল্পের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে সাগরকন্যা কুয়াকাটার দূরত্ব মাত্র ২৬৫ কিলোমিটার। যা ঢাকা থেকে কক্্রবাজারের চেয়ে প্রায় ১৫০কিমি কম। অতীত ঢাকা থেকে কুয়াকাটা সড়ক পথে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত আসতে ১৪টি ফেরি ছিল।

দীর্ঘ দিন থেকে বরিশাল বিভাগের মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়ে এসব ফেরি পারাপার হয়ে রাজধানীতে আসা যাওয়া করতো। পদ্মা সেতু যাত্রা মধ্য দিয়ে এই পথে সেই ফেরি যুগের অবসান হলো। আর এ সেতুকে ঘিরে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা নয়, পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যে ও ইতো মধ্যেই পর্যটন কেন্দ্র রুপ নিয়েছে কুয়াকাটা। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিশাল সমুদ্রের নীল জলরাশি দোলনার মতো যখন দুলে দুলে তীরে আসতে থাকে তখন পূর্ব আকাশে সূর্যে হালকা রক্তিম বৃত্তটা ক্রমেই স্পষ্ট হতে থাকে। তখন প্রথম সূর্যোদয়ের আলোতে আলোতিক হয়ে পাল্টে যায় কুয়াকাটার সমুদ্রের নীলাভ জল বর্ন। লাল বর্ণ সূর্যটা অল্পক্ষণের মধ্যেই পূর্ণ বৃত্তে রূপ নেয়। এই নতুন সূর্য পুব আকাশে নিয়ে আসে এক অপরূপ শোভা। আকাশের ক্যানভাসে সদ্য ওঠা সূর্য, নিচে সমুদ্রের নীল জল, সুদীর্ঘ বেলাভূমি আর পাশে ঘন সবুজ ঝাউবনের সমন্বয়ে কুয়াকাটা সৈকত ফিরে পায় অপরূপ সৌন্দর্য। যেখানে দাঁড়িয়ে সুর্যোদয় সুর্যাস্তের অপরুপ ও নয়নাভিরাম এবং মনভোলানো দৃশ্য ও সৈকতের দাঁড়ালে চোখে পড়বে দিগন্ত জোড়া আকাশ আর সমুদ্রর রাশি রাশি নীল জল আর সমুদ্রের নীল জলের তরঙ্গায়িত ঢেউ কাঁচ ভাঙ্গা ঝন ঝন শব্দের মত আছরে পড়ছে কিনারায় ও উড়ে যাচ্ছে সাদা গাংচিলের দল এদিক ওদিক মাছ শিকারের জন্য লড়াকু জেলেরা ট্রলারে ও নৌকায় ছুটে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রে তা উপভোগ করা যায়।

সৈকতে আগত এ সকল পর্যটকরা সাগরের নোনা জলে গাঁ ভাসিয়ে আনন্দ উন্মাদনায় মেতেছেন। কুয়াকাটা ১৪০টি হোটেল, কাঁকড়া ও ফিশ ফ্লাইয়ের দোকান ২৩টি, শুটকি দোকান ২৮টি, পোষাকের দোকান ২০টি, ছবি প্রিন্ট ও এডিটিং স্টুডি ১০টি, বার্মিজ আটার ও চকলেট দোকান ৮০টি, ঝিনকের দোকান ১২০টি রয়েছে। যেখানে আসলে সাগরের নীল জলরাশি আর ঢেউয়ের গর্জন পর্যটকদের মন কেড়ে নেয় প্রতিটি মুহূর্তে।

সারা দেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে এখনই ঝুঁকছে পায়রার দিকে। বন্দরের আশপাশ এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার হিড়িক পড়েছে। এর পাশাপাশি খাদ্য ও মাছে উদ্বৃত্ত পটুয়াখালী থেকে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে। দক্ষিণের অন্য সব জেলার মতো পটুয়াখালীবাসীর তরও আর সইছে না। এই সেতুর এখানকার পর্যটনের পাশাপাশি মৎস্য, খাদ্যশস্য আর পায়রা সমুদ্রবন্দরের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। চট্টগ্রাম আর মোংলার তুলনায় সড়কপথে ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য আনা-নেয়া খুব সহজ হবে পায়রা দিয়ে। সেই প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে পায়রা কর্তৃপক্ষ।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা যাবে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙা হবে।

ঢাকা গাজীপুর থেকে আগত পর্যটক দম্পতি সারা মনি জানান, কুয়াকাটায় ভ্রমণের জন্য সবসময়ই মনটা প্র্স্তুত থাকে। তবে পদ্মা নদীর মাওয়া ফেরি তাদের মূল প্রতিবন্ধকতা হিসাবে কাজ করতো। এবার পদ্মা সেতু তাঁদের আর কোনো বাধা থাকবে না।

পটুয়াখালী কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের উপপরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন জানান, জেলাভিত্তিক আবাদ ও উৎপাদনে পটুয়াখালী বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। এক মৌসুমে চাল উৎপাদন ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৭৯৮ টন। এ জেলায় মানুষের প্রয়োজন ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৫ টন। উদ্বৃত্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৩৩ টন চাল অন্য জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। খাদ্যশস্য উৎপাদনে পটুয়াখালীর সুনাম আছে। দেশে উৎপাদিত মুগ ডালের অর্ধেকেরও বেশি হয় এখানে। দেড় হাজার কোটি টাকার তরমুজ আর সমপরিমাণ টাকার আমন ধান বিক্রি হয় এ জেলায়। পদ্মা সেতু চালু হলে এসব পণ্য ঢাকায় পরিবহন অনেক সহজ হবে। চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ৮৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টন মুগ ডাল উৎপন্ন হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এর সিংহভাগই অন্য জেলায় পাঠানো হয়েছে।চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ৩০ হাজার ৫০ টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। সারা দেশে তরমুজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে পটুয়াখালী জেলা প্রথম স্থানে।

তিনি আরো বলেন, ‘চাল, মুগ ডাল আর তরমুজ সরবরাহের ক্ষেত্রে ফেরিঘাটে নানা জটিলতা সৃষ্টি হতো বিগত বছরে। তরমুজ পচে যেত, দাগ পড়ে যেত। এতে ব্যবসায়ীরা ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন। যে কারণে ঢাকাসহ অন্যান্য বাজারে পটুয়াখালীর তরমুজের মূল্য থাকত চড়া। ভোক্তারা অনেক বেশি মূল্য দিয়ে তরমুজ ক্রয় করত। কিন্তু এখন আর সেই দুশ্চিন্তা নাই। মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে থাকবে এ এলাকার তরমুজ। ফলে প্রান্তিক চাষিরা ফসল বিক্রি করে তাদের ন্যায্যমূল্য নিতে পারবে। এখানকার মুগ ডাল দেশের বাইরে বিশেষ করে চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। এই রুটের ফেরির ভোগান্তিতে ব্যবসায়ীরা ছিলেন অতিষ্ঠ। কিন্তু আগামী মৌসুমে এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।’

পটুয়াখালীর সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, সাগর ও নদ-নদী থেকে ২০২০-২০২১ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৭৯ টন দেশি, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ ধরা হয়েছে। জেলায় চাহিদা ৩৬ হাজার ৯৪৩ টন। বাকি ৮৭ হাজার ৩৬ টন মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হয়ে থাকে। ‘ফেরিঘাটে ট্রাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকায় বরফ গলে মাছ নষ্ট হয়ে যেত। বিশেষ করে মাওয়া ঘাটে এ দুর্ভোগ ছিল চরমে। এখন এসব মাছ ঢাকাবাসীর হাতের নাগালে থাকবে। মৎস্য বন্দর মহিপুর-আলীপুর বন্দর থেকে পাঁচ/ ছয় ঘণ্টায় ঢাকার বাজারে চলে যাবে এগুলো। এতে বজায় থাকবে প্রোটিনসহ মাছের গুণগত মান। সারা দেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে এখনই ঝুঁকছেন পায়রার দিকে। বন্দরের আশপাশ এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার হিড়িক পড়েছে।

কুয়াকাটা ট্যুরিজম গাইড এসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু জানান, ইতিমধ্যে আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি। পদ্মা সেতু কারনে বর্তমানের থেকে কয়েকগুণ বেশি পর্যটক কুয়াকাটায় আসবে। সেজন্য আমরা ট্যুর গাইডদের পরিধি বাড়াচ্ছি। তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি, সৈকতের সৌন্দর্যকে আরও বাড়ানোর চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছি।

ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, সেতু চালু হলে কুয়াকাটার একটি আমুল পরিবর্তন হবে। ঢাকা-কুয়াকাটার দূরত্বটা কমে যাওয়ার কারণে ১০-১২ ঘণ্টার পথ ৫-৬ ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে যে কারণে বর্তমানের থেকে কয়েকগুণ পর্যটক বেশি আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

কুয়াকাটার একাধিক মোটেল ও হোটেল এর ম্যানেজার জানান, ঢাকা-কুয়াকাটার দূরত্বটা কমে যাওয়ার কারণে বর্তমানের থেকে কয়েকগুণ পর্যটক বেশি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কুয়াকাটাকে ঘিরে সরকারের মাস্টার প্লান রয়েছে। কিন্তু এ মাস্টারপ্লানে কি কি উন্নয়ন কর্মকান্ড- রয়েছে তা এখনও জানতে পারছেনা কুয়াকাটায় বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা। সরকার শতশত ব্যবসায়ীকে সৈকত এলাকা থেকে উচ্ছেদ করলেও মূল সৈকতে এখনও কোন পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। এমনকি পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্তরাও এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। বর্ষায় মূল সৈকত সাগরের ভাঙ্গনে ক্রমশই ছোট হচ্ছে। কিন্তু সৈকত রক্ষায় কিছু বালু ভর্তি ব্যাগ ফেলা হলেও উন্নয়ন বলতে ওই পর্যন্তই।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, গত দুই দশকের বেশি সময়ে এখানে আগমন ঘটে দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকের। কিন্তু এখানে আসতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাঙ্গা সড়ক আর একাধিক সেতু পার করে কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের জন্য ছিল নানা রকম বিড়ম্বনা। পদ্মা সেতু ঘিরে কুয়াকাটায় বর্তমানের  কয়েকগুণ পর্যটক বেশি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সারা বছর কুয়াকাটায় আজকের দিনের মতো এ রকম পর্যটক থাকলে আমাদের ভালো হয়।

তারা আরও জানান, বাগান ও ঝাউ বাগান এলাকা রক্ষারও এখনই সময়। কেননা বর্ষা হলেইতো ভাঙ্গন শুরু হয়। প্রতিবছর কুয়াকাটায় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সৈকত পরিস্কার পচ্ছিন্নতা অভিযান, ভাঙ্গার রক্ষায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। কিন্তু যে মূল সৈকতকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর কুয়াকাটায় ভীর করে সৈই সৈকত এখনও রয়ে গেছে অরক্ষিত।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মো. মোতালেব শরিফ বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে কুয়াকাটায় এখন নতুন সম্ভাবনা। কিন্তু এখানে আসতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাঙ্গা সড়ক আর একাধিক সেতু পার করে কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের জন্য ছিল নানা রকম বিড়ম্বনা। কুয়াকাটায় এখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক অবস্থান করবে বলে তিনি জানান।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট জোনের সহকারি পুলিশ সুপার আ. খালেক বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারনে কুয়াকাটায় বিপুল পরিমাণ পর্যটকের সমাবেশ ঘটবে। আমরা সকল পর্যটকের সবধরনের নিরাপত্তা দিতে বদ্ধ পরিকর।

পৌর মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার জানান, পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের সেতু। আমরা কুয়াকাটাবাসী কখনও ভাবিনি যে পদ্মা সেতু হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং দেশী বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে পদ্মাসেতু আজ বাস্ততা। পদ্মাসেতু কুয়াকাটার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন এনে দিবে। পর্যটন ভিত্তিক বিনিয়োগ বাড়বে।

পায়রা সমুদ্র বন্দরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘পদ্মা সেতু আর পায়রা সমুদ্রবন্দর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বন্দরের অন্যতম শর্ত সড়ক সংযোগ, যেটি নিয়ে এতদিন জটিলতা ছিল। কিন্তু এখন এই সমস্যা আর থাকছে না। এখানে পণ্য খালাসের জন্য ফোর লেনের সড়ক অনেক আগেই হয়েছে। পায়রা হবে একটি আধুনিক বন্দর। ইতোমধ্যে মূল টার্মিনাল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। নাব্যতা সমস্যা দূর করতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজও চলছে। এই বন্দরে দেশি, বিদেশি অনেক জাহাজের আগমন ঘটবে। এতে আমাদের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।’

তিনি আরও জানান, বর্তমানে কুয়াকাটায় রাত্রিযাপনের ধারণ ক্ষমতা ১৫ হাজার রয়েছে। কয়েকগুণ পর্যটক হওয়ার সম্ভাবনায় বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ফাইভস্টার-্রথ্রিস্টার মানের হোটেল তৈরিতে অনেকে কাজ শুরু করছে।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরের দূরত্বে সমান হলেও মোহাম্মদ সোয়াহেলের ধারণা, ব্যবসায়ীরা পায়রাকে বেছে নেবেন বন্দরের সুবিধা ও সড়কপথে যাতায়াত সহজতর বলে। সড়কে চাপ কম বলে চট্টগ্রামের চেয়ে দ্রুততর যাতায়াত করা যাবে।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. কামাল জানান, পদ্মা সেতু ঘিরে কুয়াকাটায় রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ উন্নয়নের আশার আলো দেখছে। এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক চাকা সচল হবে।

Related Posts