মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, রাত ১২:৫৪
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪,রাত ১২:৫৪

নির্মাণাধীন সেতুর পাশে নেই পারাপারের পথ, বিপাকে পথচারীরা

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি 

২ অক্টোবর, ২০২২,

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp

৭:৪০ pm

যশোরের মনিরামপুর-রাজগঞ্জ সড়কের মনিরামপুর বাজার লাগোয়া হরিহরনদীর উপরের জরাজীর্ণ ‘রাজগঞ্জ সেতু’টি ভেঙে নতুন সেতুর জন্য দুপাশের পাকা সড়ক গভীর করে ভেঙেছে ঠিকাদার। সড়ক ভেঙে গভীর গর্ত করা হলেও জনগণের চলাচলের জন্য পাশ দিয়ে বিকল্প পথ রাখা হয়নি। ফলে জনগণের চলাচলে তীব্র ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন সেতুর দুপারের বাসিন্দারা। সেতুর স্থানে বিকল্প পথ না থাকায় তাঁদের আধা মিনিটের পথ পার হতে দুই কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে আসতে হচ্ছে।

রাজগঞ্জ সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল বহুবছর।
চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি কার্যাদেশ পেয়ে
প্রায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৬ মিটার লম্বা সেতুটি সংস্কারের কাজ পায় আই সি এল এম এম টি জেভি নামে যশোরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ পেয়ে একমাস আগে সেতুর দুপাশে রাস্তা ভেঙে কাজ শুরু করেন ঠিকাদারের লোকজন। এরপর গত সপ্তাহে সেতুর পাইলের কাজ শুরু হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, নতুন সেতু নির্মাণের জন্য পুরনো সেতুর দুপাশে পাকা সড়ক ভেঙে ১০-১৫ ফুট গভীর করে খোঁড়া হয়েছে। পথচারী পারাপারে কোন বিকল্প পথ রাখা হয়নি। দূর থেকে আসা বা সেতুর দুপাড়ের লোকজন ও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পাকা সড়ক থেকে গভীরে নদীতে নেমে হেঁটে পারাপার হচ্ছেন। সীমাহীন দুর্দশা নিয়ে লোকজন পারাপার হলেও তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই কারো।

উপজেলার খেদাপাড়া, ঝাঁপা, হরিহরনগর, মশ্মিমনগর ও চালুয়াহাটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন রাজগঞ্জ সেতু পার হয়ে মনিরামপুর বাজারে ওঠেন। এছাড়া ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ও সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মানুষ মনিরামপুরের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় এ সেতু ব্যবহার করেন। রাজগঞ্জ সেতুর পাশ দিয়ে বিকল্প পথ না থাকায় এসব অঞ্চল থেকে আসা লোকজন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

রাজগঞ্জ সেতুর এক কিলোমিটার দক্ষিণে নেহালপুর-মুক্তারপুর সড়ক। এ সড়কে মনিরামপুর মহিলা কলেজের সামনে দিয়ে এসে পৌরশহরে উঠতে পারেন পথচারীরা। কিন্তু রাস্তাটি দূরের অধিকাংশ মানুষের কাছে অচেনা। মোটরসাইকেলের কিছু যাত্রী মনিরামপুর বাজারে আসতে নেহালপুর-মুক্তারপুর সড়ক ব্যবহার করলেও ইজিবাইক, ভ্যান ও ট্রেকারের যাত্রীদের চালকরা ওই পথে না এনে নির্মাণাধীন সেতুর পশ্চিম পাড়ে নামিয়ে দেন। তখন বাধ্য হয়ে যাত্রীরা হরিহরনদীর ভিতরে নেমে হেঁটে মনিরামপুর বাজারে ওঠছেন।

পথচারীরা বলছেন, সেতুর পশ্চিম পাশে রাস্তা গভীর করে খোঁড়া। সেখানে পথচারীদের উত্তর পাশের দোকানের ভিতরের গলি দিয়ে এসে সরুপথে নদীর ভিতরে নেমে পার হতে হচ্ছে। যারমধ্যে স্কুলগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রয়েছে। শুকনার সময় কষ্ট করে নদীর ভিতর দিয়ে হাঁটা গেলেও বৃষ্টি হলে তা সম্ভব হচ্ছে না। তখন কাদায় পা পিছলে পড়ে যেতে হচ্ছে পথচারীদের। ইতিমধ্যে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীসহ এক নারী পা পিছলে নদীর ভিতরে পড়ে গেছেন বলে খবর মিলেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, সেতু নির্মাণের স্থানে নদীর পূর্ব পাড়ে অনেক জায়গা খালি। পশ্চিম অংশে দু পাশে জমি না থাকায় সেতুর উত্তরের ভবনের মালিক কালীদাস ভবনের রেলিং ভেঙে হাঁটার জায়গা দিতে চাচ্ছেন। বিষয়টি ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারকে একাধিকবার জানালেও তাঁরা বিকল্প পথের কোন ব্যবস্থা করেননি।

মনিরামপুর সরকারি প্রভাতী বিদ্যাপীঠের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী নওশীন বলে, আমাদের বাড়ি সেতুর পশ্চিমপাশে তাহেরপুর গ্রামে। প্রতিদিন গভীর গর্তে নেমে হেঁটে নদী পার হয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতে আমাদের কষ্ট হয়।
এদিকে বিকল্প পথ না থাকায় কেনাবেচা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজগঞ্জ সেতুর পশ্চিম পাড়ের ব্যবসায়ীরা।
মধুমিতা সিনেমা হলের পাশের মোবাইল সামগ্রীর দোকানি আব্দুর রহমান বলেন, আগে ভাসমান কিছু খরিদ্দার আসত। একমাস ধরে কোন ক্রেতা নেই। বাজার থেকে কোন ওষুধ আনতে হলে আমাদের এখন ১ মিনিটের পথ ১ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে। নদীর উপর দিয়ে নিজেরা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে নেব ভাবছি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সেতু সংস্কার কাজ দেখভাল করছেন ইউনুস আলী নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সেতু সংস্কারের জন্য জরিপ হয়েছে। সেখানে ১০০ মিটার দূরে দক্ষিণে পারাপারের জন্য দুটো সেতু দেখানো হয়েছে। এ জন্য ‘রাজগঞ্জ সেতু’র নকশায় হাঁটা পথের উল্লেখ নেই। ঠিকাদারতো আর নিজের টাকায় বিকল্প পথের ব্যবস্থা করবে না।

উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার রায় বলেন, সেতুর পশ্চিম অংশে দু পাশে দুটো ভবন থাকায় বিকল্প পথের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। পশ্চিম পাশে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। কিছুদূর কাজ এগিয়ে আসলে উপজেলা পরিষদের বরাদ্দে বিকল্প পথ করা যাবে। সে জন্য ১ থেকে দেড় মাস সময় লাগবে।

Related Posts

নির্মাণাধীন সেতুর পাশে নেই পারাপারের পথ, বিপাকে পথচারীরা

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি 

২ অক্টোবর, ২০২২,

৭:৪০ pm

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp

যশোরের মনিরামপুর-রাজগঞ্জ সড়কের মনিরামপুর বাজার লাগোয়া হরিহরনদীর উপরের জরাজীর্ণ ‘রাজগঞ্জ সেতু’টি ভেঙে নতুন সেতুর জন্য দুপাশের পাকা সড়ক গভীর করে ভেঙেছে ঠিকাদার। সড়ক ভেঙে গভীর গর্ত করা হলেও জনগণের চলাচলের জন্য পাশ দিয়ে বিকল্প পথ রাখা হয়নি। ফলে জনগণের চলাচলে তীব্র ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন সেতুর দুপারের বাসিন্দারা। সেতুর স্থানে বিকল্প পথ না থাকায় তাঁদের আধা মিনিটের পথ পার হতে দুই কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে আসতে হচ্ছে।

রাজগঞ্জ সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল বহুবছর।
চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি কার্যাদেশ পেয়ে
প্রায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৬ মিটার লম্বা সেতুটি সংস্কারের কাজ পায় আই সি এল এম এম টি জেভি নামে যশোরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ পেয়ে একমাস আগে সেতুর দুপাশে রাস্তা ভেঙে কাজ শুরু করেন ঠিকাদারের লোকজন। এরপর গত সপ্তাহে সেতুর পাইলের কাজ শুরু হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, নতুন সেতু নির্মাণের জন্য পুরনো সেতুর দুপাশে পাকা সড়ক ভেঙে ১০-১৫ ফুট গভীর করে খোঁড়া হয়েছে। পথচারী পারাপারে কোন বিকল্প পথ রাখা হয়নি। দূর থেকে আসা বা সেতুর দুপাড়ের লোকজন ও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পাকা সড়ক থেকে গভীরে নদীতে নেমে হেঁটে পারাপার হচ্ছেন। সীমাহীন দুর্দশা নিয়ে লোকজন পারাপার হলেও তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই কারো।

উপজেলার খেদাপাড়া, ঝাঁপা, হরিহরনগর, মশ্মিমনগর ও চালুয়াহাটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন রাজগঞ্জ সেতু পার হয়ে মনিরামপুর বাজারে ওঠেন। এছাড়া ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ও সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মানুষ মনিরামপুরের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় এ সেতু ব্যবহার করেন। রাজগঞ্জ সেতুর পাশ দিয়ে বিকল্প পথ না থাকায় এসব অঞ্চল থেকে আসা লোকজন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

রাজগঞ্জ সেতুর এক কিলোমিটার দক্ষিণে নেহালপুর-মুক্তারপুর সড়ক। এ সড়কে মনিরামপুর মহিলা কলেজের সামনে দিয়ে এসে পৌরশহরে উঠতে পারেন পথচারীরা। কিন্তু রাস্তাটি দূরের অধিকাংশ মানুষের কাছে অচেনা। মোটরসাইকেলের কিছু যাত্রী মনিরামপুর বাজারে আসতে নেহালপুর-মুক্তারপুর সড়ক ব্যবহার করলেও ইজিবাইক, ভ্যান ও ট্রেকারের যাত্রীদের চালকরা ওই পথে না এনে নির্মাণাধীন সেতুর পশ্চিম পাড়ে নামিয়ে দেন। তখন বাধ্য হয়ে যাত্রীরা হরিহরনদীর ভিতরে নেমে হেঁটে মনিরামপুর বাজারে ওঠছেন।

পথচারীরা বলছেন, সেতুর পশ্চিম পাশে রাস্তা গভীর করে খোঁড়া। সেখানে পথচারীদের উত্তর পাশের দোকানের ভিতরের গলি দিয়ে এসে সরুপথে নদীর ভিতরে নেমে পার হতে হচ্ছে। যারমধ্যে স্কুলগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রয়েছে। শুকনার সময় কষ্ট করে নদীর ভিতর দিয়ে হাঁটা গেলেও বৃষ্টি হলে তা সম্ভব হচ্ছে না। তখন কাদায় পা পিছলে পড়ে যেতে হচ্ছে পথচারীদের। ইতিমধ্যে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীসহ এক নারী পা পিছলে নদীর ভিতরে পড়ে গেছেন বলে খবর মিলেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, সেতু নির্মাণের স্থানে নদীর পূর্ব পাড়ে অনেক জায়গা খালি। পশ্চিম অংশে দু পাশে জমি না থাকায় সেতুর উত্তরের ভবনের মালিক কালীদাস ভবনের রেলিং ভেঙে হাঁটার জায়গা দিতে চাচ্ছেন। বিষয়টি ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারকে একাধিকবার জানালেও তাঁরা বিকল্প পথের কোন ব্যবস্থা করেননি।

মনিরামপুর সরকারি প্রভাতী বিদ্যাপীঠের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী নওশীন বলে, আমাদের বাড়ি সেতুর পশ্চিমপাশে তাহেরপুর গ্রামে। প্রতিদিন গভীর গর্তে নেমে হেঁটে নদী পার হয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতে আমাদের কষ্ট হয়।
এদিকে বিকল্প পথ না থাকায় কেনাবেচা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজগঞ্জ সেতুর পশ্চিম পাড়ের ব্যবসায়ীরা।
মধুমিতা সিনেমা হলের পাশের মোবাইল সামগ্রীর দোকানি আব্দুর রহমান বলেন, আগে ভাসমান কিছু খরিদ্দার আসত। একমাস ধরে কোন ক্রেতা নেই। বাজার থেকে কোন ওষুধ আনতে হলে আমাদের এখন ১ মিনিটের পথ ১ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে। নদীর উপর দিয়ে নিজেরা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে নেব ভাবছি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সেতু সংস্কার কাজ দেখভাল করছেন ইউনুস আলী নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সেতু সংস্কারের জন্য জরিপ হয়েছে। সেখানে ১০০ মিটার দূরে দক্ষিণে পারাপারের জন্য দুটো সেতু দেখানো হয়েছে। এ জন্য ‘রাজগঞ্জ সেতু’র নকশায় হাঁটা পথের উল্লেখ নেই। ঠিকাদারতো আর নিজের টাকায় বিকল্প পথের ব্যবস্থা করবে না।

উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার রায় বলেন, সেতুর পশ্চিম অংশে দু পাশে দুটো ভবন থাকায় বিকল্প পথের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। পশ্চিম পাশে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। কিছুদূর কাজ এগিয়ে আসলে উপজেলা পরিষদের বরাদ্দে বিকল্প পথ করা যাবে। সে জন্য ১ থেকে দেড় মাস সময় লাগবে।

Related Posts