যশোরের মনিরামপুরে একটি নকল ‘ট্যাং’ (সফট ড্রিংক পাউডার) তৈরির কারখানার সন্ধান মিলেছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী হাসান আজ বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে উপজেলার কাশিমনগর ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামে আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে অবস্থিত নকল ট্যাং কারখানায় অভিযান চালিয়েছেন। সেখানে বিএসটিআই’র নকল সিল ব্যবহার করে মানহীন ট্যাং তৈরির কাজ চলছিল। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত বিপুল পরিমাণ নকল ট্যাং পাউডার জব্দ করে পুড়িয়ে দিয়েছেন।
নকল ট্যাংক তৈরির অভিযোগে আদালত বাড়ির মালিক আনোয়ার হোসেন ও কারখানার ব্যবস্থাপক রুহুল কুদ্দুসকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
অভিযানে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এণ্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মাঠ পরিদর্শক তারিকুল ইসলাম সুমন, আলী আকবর সোহেল, শাহানুর হোসেন খান, থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) অশোক কুমার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী হাসান বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া বিএসটিআই’র লোগো ব্যবহার করে কোন প্রকার ল্যাব টেস্ট ছাড়া খোলা পরিবেশে কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে মথুরাপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন নিজ বাড়িতে নকল সফট ড্রিংক পাউডার (ট্যাং) উৎপাদন করছিলেন। আজ দুপুরে সরেজমিন সেখানে গিয়ে কয়েকজন শ্রমিককে ট্যাং তৈরির কাজে পাওয়া গেছে। শুধুমাত্র চিনি, রং আর ফ্লেভার দিয়ে তাঁরা আম ও কমলার স্বাদের ট্যাং তৈরি করছিলো।’
আলী হাসান বলেন, বাড়ির মালিক আনোয়ার হোসেন কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। অবৈধভাবে বিএসটিআই’র লোগো ব্যবহার ও মানহীন সফট ড্রিংক পাউডার তৈরির অভিযোগে মালিক আনোয়ার হোসেন ও ব্যবস্থাপক রুহুল কুদ্দুসকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বিপুল পরিমান নকল সফট ড্রিংক পাউডার জব্দ করেছি। পরে সেগুলো পুড়িয়ে ও পানিতে ফেলে নষ্ট করা হয়েছে।
বিএসটিআই’র মাঠ পরিদর্শক তারিকুল ইসলাম সুমন বলেন, দপ্তর থেকে আমাদের কাছে যশোর অঞ্চলে তৈরি হওয়া সফট ড্রিংক পাউডার কারখানার তালিকা চাওয়া হয়েছিল। আমাদের দেওয়া তালিকায় মনিরামপুরের কোন কারখানার নাম ছিল না। পরে জানতে পেরেছি মনিরামপুরের রাজগঞ্জ-চাঁচড়া সড়কের মথুরাপুর গ্রামে পাকা রাস্তার পাশে আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে বিএসটিআই’র নকল সিল ব্যবহার করে ট্যাং তৈরি হচ্ছে। এ অভিযোগে আজ বুধবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে আনুমানিক ৯৭০ কেজি মানহীন সফট ড্রিংক পাউডার জব্দ করে নষ্ট করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৬ লাখ ২১ হাজার টাকা।
পরিদর্শক তারিকুল ইসলাম বলেন, তিন বছর ধরে আনোয়ার হোসেন নিজ বাড়িতে দুটি কক্ষে ১০-১২ জন শ্রমিক খাটিয়ে নকল ট্যাং তৈরি করে আসছিলেন। এ ট্যাং ‘টেংগি কমলা’ ও ‘টেংগি ম্যাংগো’ নামে ৫০০ গ্রামের প্লাস্টিকের পাত্র ও ১২৫ গ্রামের কাগজের প্যাকেটে ভরে চৌধুরী ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজ, মনিরামপুর, যশোরের নামে বাজারে সরবরাহ দিচ্ছিলেন তিনি। তাঁর উৎপাদিত আম ও কমলার স্বাদের নকল ট্যাং ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ দেওয়া হচ্ছিল।
অভিযুক্ত বাড়ির মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, কাশিমনগর ইউনিয়নের শিরিলী গ্রামের হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি আমার দুটো কক্ষ ভাড়া নিয়ে এ ট্যাং তৈরি করে। রমজান উপলক্ষে বছরে ৩ মাস ট্যাং তৈরির কাজ চলে। এরপর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর জানুয়ারির মাঝামাঝিতে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা ১২ জন শ্রমিক এখানে কাজ করি। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় হাবিবুর রহমানকে সেখানে পাওয়া যায়নি।