যশোরের মনিরামপুরের খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের। পরিষদের সচিব আব্দুল আলিম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সনদ প্রতি সরকারি খরচের ৩ গুণ টাকা নিচ্ছেন। পরিষদে যোগদানের পর থেকে ৬ মাস ধরে তিনি এভাবে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ।
অভিযোগ রয়েছে জন্ম সনদে সরকারি খরচ দুই বছরের নিচের জন্য ২৫ টাকা ও তার উপরের বয়সীদের জন্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও সচিব প্রতি সনদে ১২০-১৫০ টাকা নিচ্ছেন। এছাড়া জন্ম সনদের ত্রুটি সংশোধনের জন্য সরকারি খরচ ১০০ টাকার পরিবর্তে সচিব আব্দুল আলিম ২৫০-৩০০ টাকা নিচ্ছেন।
সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে সোমবার (১০ অক্টোবর) সরেজমিন খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ঘুরে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এ প্রতিবেদকের সামনে অন্তত ১০ জনের কাছ থেকে তিনি বাড়তি টাকা নিয়েছেন।
যাঁরা পরিষদের বাইরে থেকে জন্ম সনদের আবেদন করে জমা দিচ্ছেন তাঁদের কাছ থেকেও নির্ধারিত ফির ৩ গুণ টাকা নিচ্ছেন সচিব।
মামুদকাটি গ্রামের কলেজ ছাত্র আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমার, বাবা ও মার তিন জনের জন্ম সনদের জন্য বাইরে থেকে আবেদন করে খেদাপাড়া ইউনিয়ন জমা দিছি। সচিব আমারটায় ১৫০ টাকা, বাবারটায় ১৩০ টাকা ও মারটায় ১২০ টাকা নেছে’।
একই গ্রামের ভ্যানচালক রবিউল ইসলাম বলেন, আমার ২ বছরের কম বয়সী মেয়ে তাকিয়ার সনদ বের করার জন্য বাইরে থেকে আবেদন করে পরিষদে জমা দিছি। সচিব ১৫০ টাকা চাইছে। অনুরোধের পর ২০ টাকা কম নেছে।
অভিযোগ রয়েছে, সচিব আব্দুল আলিমের কথা মত কাজ না করলে সেবাগ্রহীতাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন তিনি। টাকা কম দিতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ফাইল ছুড়ে ফেলেন। আবেদন জমা দেওয়ার সময় টাকা কম দিলে সচিব খাতায় লিখে রাখেন। পরে সনদ আনতে গেলে সেই টাকা নেন তিনি।
এছাড়া টাকাসহ আবেদন জমা দেওয়ার পর ফাইল হারানোর কথা বলে দ্বিতীয়বার টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সচিব আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে। কাশিপুর গ্রামের সুমাইয়া খাতুন বলেন, আমার স্বামী মোবাইদুল হোসেনের জন্ম সনদের জন্য ৫ মাস আগে কাগজপত্রসহ সচিবের কথামত টাকা দিছি। কদিন পরে সনদ আনতে গেলে সচিব বলেছে, ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না। পরে আবার নতুন করে কাগজপত্র ও টাকা দিয়ে সনদ করানো লেগেছে।
জন্ম সনদে বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়ে খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, দুমাস আগে পরিষদে সভা করে জন্ম সনদের নতুন আবেদনের জন্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিষদের সচিব আব্দুল আলিম বলেন, বাইরে থেকে আবেদন করে আনলেও সনদ বের করতে উদ্যোক্তাদের ৫০ টাকা করে দিতে হয়। এছাড়া কাগজ কালির দাম বেড়েছে। এজন্য বেশি টাকা নেওয়া হয়।
খেদাপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম জিন্নাহ বলেন, জন্ম সনদের নতুন আবেদনে ১০০ টাকা নেওয়ার কথা। সচিব কত নিচ্ছেন বলতে পারব না। আলোচনা করে ঠিক করে দেব।
জানতে চাইলে যশোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ হুসাইন শওকত বলেন, বাইরে থেকে আবেদন করলে জন্ম সনদে সরকারি ফির বেশি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।