সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে চলছে র্যাবের লং রেঞ্জ প্যাট্রল দলের বিশেষ অভিযান। অভিযানের দ্বিতীয় দিন রোবার (২৫ডিসেম্বর) সকালে র্যাব সদস্যরা ‘এলিট টাইগার্স’ ট্রলারযোগে বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসসংলগ্ন এলাকায় এসে পৌঁছায়। আভিযানিক দলের সঙ্গে ছিলেন খুলনা র্যাব-৬ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মোসতাক আহমেদ।
এসময় র্যাব অধিনায়ক মোসতাক স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি জেলেদের নির্বিঘ্নে মাছ ধরার জন্য বনে যেতে বলেন এবং তাদের সার্বিক নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। পরে শতাধিক জেলের মাঝে শীত নিবারণের কম্বর বিতরণ করেন র্যাবের সিও।
এর আগে শরিবার (২৪ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনা থেকে র্যাবের লং রেঞ্জ প্যাট্রল দল, গোয়েন্দা শাখা এবং ছদ্মবেশী দলের ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে দস্যুদমনে সুন্দরবনে অভিযান শুরু করে। র্যাবের অভিযানে জেলে-মহাজনদের মাঝেও অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে।
এদিকে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, র্যাবের অভিযানের খবর পেয়ে সদ্য গঠিত বনদস্যু ‘নয়ন’ বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড মাসুম ফরাজী (৪৫) ওরফে আঙ্গুল কাটা মাসুমসহ দুই সদস্য দল ছেড়ে লোকালয়ে উঠে যান। তারা গোপনে পালিয়ে যাওয়ার সময় শনিবার রাতে পাথরঘাটা উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন চরদুয়ানী এলাকায় আটক হয়েছেন বলে একাধিক জেলে ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তাদের আটকের বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। বনদস্যু মাসুম ফরাজী শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামের মকবুল ফরাজীর ছেলে। এই বনদস্য মাসুম সুন্দরবনের একসময়ের দুর্ধর্ষ বনদস্যু বাদল বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তবে তার সহযোগীর নাম ঠিকানা জানা সম্ভব হয়নি।
সুন্দরবনের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. জালাল মোল্লা (৪৫), খুড়িয়াখালী গ্রামের জেলে হারুন মোল্লা (৫০), চালিতাবুনিয়া গ্রামের জেলে ছগির বয়াতীসহ বেশ কয়েক জন জেলে ও মহাজন বলেন, আমরা দীর্ঘ চার বছর যাবত দস্যুমুক্ত সুন্দরবনে নিশ্চিন্তে মাছ ধরেছি। কিন্তু হঠাৎ করে আবার দস্যুদের তৎপরতায় জেলেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। র্যাবের অভিযান শুরু হওয়ায় আমরা মাছ ধরার জন্য বনে যেতে সাহস পাচ্ছি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেস ব্রিফিংকালে র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মোসতাক আহমেদ বলেন, সুন্দরবনে কোনোভাবেই দস্যুদের আস্তানা গড়তে দেওয়া হবে না। আমাদের তিনটি দল বনের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। আশা করি দ্রæত আমরা নবগঠিত দস্যুদের আটকে সক্ষম হবো। জেলেরা যাতে নির্বিঘ্নে বনে মাছ শিকার করতে পারে সেজন্য তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদেরকে স্বাভাবিকভাবে বনে যেতে সাহস যোগানোর জন্যই আমরা এখানে এসেছি। সার্বক্ষণিক জেলেদের পাশে আছে র্যাব।
র্যাবের অধিনায়ক আরো বলেন, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বের প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষনা করেন। ওই সময় দস্যুদের ৩২৬টি পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে পুনঃর্বাসন করা হয়। এরপর দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে র্যাব তা কঠোরহস্তে দমন করেছে। সম্প্রতি নব্য দস্যুদলটি মাছ ধরা মৌসুমে দস্যুতা শুরু করলে তাদের নিচিহ্ন করতে র্যাবও দ্রæত কার্যক্রম শুরু করে। সুন্দরবন পুরোপুরি দস্যুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত র্যাবের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জেলেদের সঙ্গে মতবিনিময় ও প্রেস ব্রিফিংকালে র্যাবের কোম্পানী কমান্ডার এসপি মো. বদরুদ্দোজা, স্কোয়াড কমান্ডার গোলাম রহমান ও আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে নয়ন বাহীনি নামে একটি নতুন গঠিত বনদস্যুদল সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বেড়ির খাল ও হরমাল খাল এলাকা থেকে ১৫ জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে। অপহরণের ৬ দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে দস্যুদের কবল থেকে জেলেরা ছাড়া পান। এ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তৎপর হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনি।