একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার জন্যই পদ্মা সেতু আজ বাস্তবে রুপ নিয়েছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্প হাতে নেয়। সবকিছু ঠিকঠাক মতই চলছিল। সম্ভাব্যতা যাচাই থেকে শুরু করে সেতু নির্মাণে অর্থায়ন যাবতীয় কর্মকান্ড এগিয়ে চলছিল। বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে সম্মতি দিয়েছিল। ২০১৪ সালে সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার ঘোষণা ছিল।
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রত্যাশায় বাংলাদেশের মানুষ প্রহর গুণছিল। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সাথে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল হবে। রাজধানীর সাথে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের মানুষের সময়, দূরত্ব ও অর্থ সাশ্রয় হবে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে সেতুটি অবদান রাখবে ইত্যাদি অনেক অনেক স্বপ্ন ছিল।
কিন্তু শুধুমাত্র প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে দেশীয় একটি মহলের অপতৎপরতায় শেষ মুহূর্তে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে অসম্মতি জানায়। তারা কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়। যেখানে অর্থ ছাড়াই দেওয়া হয়নি, কাজ শুরু হয়নি, সেখানে দুর্নীতি কিভাবে হলো-এ প্রশ্নের সদুত্তর তারা দিতে পারেনি। আসল কথা এতবড় মহৎ একটি কাজ আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনার হাত দিয়ে সম্পন্ন হোক এটা ছিল তাদের কাছে ঈর্ষার বিষয়। দেশের ক্ষতি হয় হোক, মানুষ কষ্ট পায় পাক, কিন্তু কৃতিত্ব কিছুতেই বঙ্গবন্ধু কন্যার দিকে যেন না যায় এমনটিই তাদের মনোভাব।
বিশ্ব ব্যাংকসহ সকল দাতা সংস্থা যখন দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হাত গুটিয়ে নিল, তখন বাংলার মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছিল। তাদের দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন ধূলিস্যাত হয়ে গিয়েছিল। পদ্মা ব্রিজ বাস্তবায়ন যখন সুদূর পরাহত তখনই শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মিত হবে। এ যে কতবড় সাহসী ঘোষণা তা তখন কল্পনাও করা যায়নি। সত্যি বলতে কি এই ঘোষণা তখন আমরা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারিনি। মনে হয়েছিল তিনি আমাদের শান্তনা দিচ্ছেন। দু’দিন গেলেই এ দুঃখ আমরা ভুলে যাবো। আর যড়যন্ত্রকারীরা আড়ালে মুচকি হেসেছে। তারা টিটকিরি করেছে। সমালোচকরা পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের বিপক্ষে নানা যুক্তি দেখিয়েছে।
তারা বলেছে, এতবড় একটা প্রকল্প দেশীয় অর্থায়নে শুরু করলে অন্যান্য চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে। নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। সাধারণ জনগণকে সাংঘাতিক অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলা করতে হবে। দেশ ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে যাবে-ইত্যাদি অনেক যুক্তি। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা এ যুক্তিগুলি প্রাথমিকভাবে বিশ্বাসও করেছিলাম। হয়ত সরকারি নীতি নির্ধারকদের অনেকেই প্রথমটায় শেখ হাসিনার এই ঘোষণাকে সহজভাবে নেননি। এটা যে সত্যিই সম্ভব তা বিশ্বাস করা ছিল কঠিন। কিন্তু একমাত্র শেখ হাসিনা, যিনি দেশী-বিদেশী সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে, সকল সমালোচনা অগ্রাহ্য করে তার লক্ষ্যে অবিচল থাকলেন। নতুন করে শুরু হলো পদ্মা ব্রিজ নির্মাণের মহাযজ্ঞ। প্রমানিত হলো আমরা সবাই ভুল, তিনিই সঠিক।
আমরা প্রত্যক্ষ করলাম এই কয়েক বছরে দেশ একটুও পিছিয়ে যায়নি। বরং সার্বিকভাবে কল্পনাতিত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। জনগণকে কোনো অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলা করতে হয়নি। অন্য কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়নি, বরং সমানতালে এগিয়ে চলেছে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, উড়াল সড়ক, কর্ণফুলি টানেল, মেট্রো রেলসহ অসংখ্য ছোট বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। ষড়যন্ত্রকারী আর সমালোচকদের আশাহত করে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান বাস্তব। একদিকে যেমন ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র চলছিল, অন্যদিকে তখন আমরা দেখেছি একে একে নদী বক্ষ থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে পিলার, পিলারের উপর একটি একটি করে স্প্যান বসেছে। সাফল্যের প্রতিটি ঘটনা মিডিয়ার কল্যাণে দিনের পর দিন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এই সাফল্যে ওদের মুখে চুনকালি পড়েছে। আর বাংলার মানুষের বুক গর্বে স্ফীত হয়েছে।
পদ্মা ব্রিজ আমাদের দেশে মনুষ্য নির্মিত সবচেয়ে বড় স্থাপনা। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বপ্নের এই সেতুটি আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করা হবে। মানুষ ওই ক্ষণটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ইতোমধ্যে সবকাজ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষামূলক যান চলাচল করেছে। ২৫ জুনের পর থেকে সাধারণ মানুষ এটি ব্যবহার করবে। ধীরে ধীরে বিশাল এই অঞ্চলের দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। এ অঞ্চলের পশ্চাদপদ জায়গাগুলিতে প্রাণ সঞ্চারিত হবে। সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। নতুন নতুন শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচিত হবে। পর্যটন শিল্পে নব দিগন্ত উন্মোচিত হবে। কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। রাজধানীর উপর মানুষের চাপ কমবে। কারণ দূরত্ব ও সময় কমে যাওয়ায় খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোসহ বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার মানুষকে আর কাজের জন্য দিনকে দিন ঢাকায় পড়ে থাকতে হবে না। তারা কাজ সেরে দিনে দিনেই নিজ বাড়িতে ফিরে আসতে পারবে। মূমূর্ষ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সহজে রাজধানীতে নেওয়া যাবে।
এমনিভাবে একটি সেতু হবে একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের মাইল ফলক। দূরদর্শী শেখ হাসিনা এটা বুঝেছিলেন। তাই তিনি সংকল্পে অবিচল ছিলেন। সেতু নির্মাণের মহাযজ্ঞ আজ সফলভাবে শেষ হয়েছে। এখন এই সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কর্মচাঞ্চল্য ও উন্নয়নের মহাযজ্ঞ শুরু হবে। জয় হলো শেখ হাসিনার দৃঢ়তার, জয় হলো বাংলার জনতার!
লেখক : সন্তোষ দাস
প্রভাষক, সরকারি ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা ডিগ্রি কলেজ
ফকিরহাট, বাগেরহাট
ই-মেইল : santoshlipi71@gmail.com